ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরী হয়?

ক্ষুধার্ত ব্ল্যাক হোল গুলো এখন বড় বড় তারা গুলোকেও গলধ:করণ করা শুরু করেছে! হাসিয়েন না ভাই, একটু আগেই “দ্য গার্ডিয়ান” এ পড়লাম এই ঘটনা। অয় ভাই, ব্ল্যাক হোল কি সেটা ঠিকঠাক মত জানেন তো? না জানলে চলেন বিস্তারিত জেনে আসি।
অচিন্তনীয় পরিমাণ ভর বিশিষ্ট মহাকাশীয় বস্তুকেই বইয়ের ভাষায় ব্ল্যাক হোল বলে। ভর যত বেশি হয় গ্রাভিটেশনাল ফোর্স তত বেশি হয়। ব্লাক হোলের গ্রাভিটেশনাল ফোর্স এত বেশি হয় যে তার আওতায় একটা আলোক বিন্দু চলে গেলেও সেটা আর ফিরে আসতে পারে না।
আইনিস্টাইন বিংশ শতাব্দীতে তাঁর জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটির মাধ্যমে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন। যদিও বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই এখন ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বে বিশ্বাসী তার পরেও এমন কোন শক্তিশালী প্রমাণ তাদের কাছে নেই যা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করে।
এখনো এমন কিছু বিজ্ঞানী আছে যারা মনে করেন ব্ল্যাক হোল কোনো প্রাকৃতিক বিষয় নয়। তাঁরা বড় আকারের নক্ষত্র গুলোর মৃত্যুর পরবর্তী স্টেপকে ব্ল্যাক হোল বলতে পছন্দ করেন।
এটা গেলো ব্ল্যাক হোল পরিচিতি। এখন আসি সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীগণ ব্ল্যাক হোলের কোন ব্যাপার টা নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছেন সেটার বর্ণনায়। ইদানিং তাঁদের মাথায় একটা মিলিওন ডলার কোয়েশ্চেন এসেছে। আর সেটা হলো “ব্ল্যাক হোলের ভেতর কি হয়?” মানে “ব্ল্যাক হোলের তীব্র গ্রাভিটেশনাল ফোর্সের অভ্যন্তরে ভরযুক্ত বস্তুগুলোর পরিণতি কি হয়?”
অনেকে মনে করেন যেহেতু ব্ল্যাক হোল সেগুলোকে অকল্পনীয় শক্তিতে টানে, তাই সেগুলো “স্ম্যাশড” হয়ে যায় কিংবা নি:শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আসলেই কি কোনো ভর যুক্ত বস্তুর পক্ষে অকল্পনীয় শক্তির প্রভাবে নি:শেষ হয়ে যাওয়া সম্ভব? এই ব্যাপারে আসলে কল্পনা ছাড়া আর বেশি কিছু করা যায় না। কারণ ব্ল্যাক হোলের ভেতরে আসলেই কি হয় তা জানার মত কোনো উপায় মানবজাতি এখনো উদ্ভাবন করতে পারে নি। অতিরিক্ত চিন্তা করতে গেলে পুরো ব্যাপারটাকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মত মনে হয়।
ব্ল্যাক হোলের একটা প্রধান বৈশিষ্ট হলো এটার “ইভেন্ট হরাইজন”। একটু বুঝিয়ে বলি বিষয়টা। এটার একটা অদৃশ্য দেয়াল আছে যা ব্ল্যাক হোলকে এই মহাবিশ্বের অন্য সব কিছু থেকে পৃথক করে রাখে। যদি কোনো নক্ষত্র এই “ইভেন্ট হরাইজন” অঞ্চল ক্রশ করে যেতে চায় তাহলে সেটা অচিন্তনীয় পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে নিভু নিভু বাতির মত এক সময় নিভে যাবে।
ব্ল্যাক হোলের ফরমেশনকে আপনি যদি “প্রি-কন্সট্রাক্টেড” ধরে নিতে না চান তাহলে একটাই পথ খোলা। আর তা হলো “ডেড স্টারস” একসময় ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়—এটা মেনে নেয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এবং হারভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ বলছেন, “স্ম্যাশড স্টার” গুলোর ফ্লেয়ার কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যতক্ষণ না এর অভ্যন্তরীণ গ্যাস ঠান্ডা হচ্ছে। এবং বর্তমানে তাঁরা এই ধরণের ফ্লেয়ার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই ফ্লেয়ারের ব্যাপারটাই তাদের ব্ল্যাক হোলের ফরমেশন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তাঁরা “প্যান-স্টারস” নামের একটা টেলিস্কোপ বানিয়েছেন। টেলিস্কোপটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১.৮ মিটার। অতি সম্প্রতি এটি উত্তর অর্ধাকাশে তার সাড়ে তিন বছরের সার্ভে শেষ করেছে। টেলিস্কোপটির কাজ ছিল আকাশের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের তারা গুলোর ঔজ্বল্যের তারতম্য শণাক্ত করা।
গবেষক দলটি সৌরমন্ডলের কেন্দ্রগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সাধারণভাবে সৌরমন্ডলের কেন্দ্রেই ব্ল্যাক হোল বা এর সদৃশ বস্তুর অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে জোরালো বলে ধরে নেয়া হয়। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে গত সাড়ে তিন বছরে তাঁদের অন্তত ১০ টি ফ্লেয়ার দেখার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা একটিও দেখতে পান নি।
এই ঘটনা এই মতবাদকেই জোরালোভাবে সমর্থন করে যে সৌরমন্ডলের কেন্দ্রে অবস্থিত বস্তুগুলো আসলেই ব্ল্যাক হোল এবং এগুলো “ডেড স্টারস” থেকে সৃষ্ট নয়। আর এগুলোর সীমা রেখার ভেতরে কোনো স্টার বা নক্ষত্র আসার চেষ্টা করলে সেই নক্ষত্রগুলো ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
প্রতিবেদকঃ তানভীর ইশরাক

Comments are closed.