আমার এক ছাত্র আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে আবিষ্কার করবার মত আর কিই বা বাকি আছে আমাদের? উত্তরটা দেয়ার জন্য আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই। ধরা যাক একটা ছোট বাল্ব। ভেবে নিন এর ভেতর খুব ছোট একটা জায়গা জুড়ে আমাদের বসবাস।আমাদের জানার জগত বা যতটুকু যা কিছু আমরা জানি বা কল্পনা করতে পারি তা সবটুকু এই বাল্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তার ভেতরে ক্ষুদ্র জায়গা জুড়ে আছে পৃথিবী। যেখানে আমি, আপনি, আমরা সবাই বসবাস করি। যেখানে প্রতিদিন জন্ম হয় নতুন প্রাণের। যেখানে তৈরি হয় সভ্যতা। যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার আর বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় এক সমাবেশ। যেখানে আছে ধর্ম, ভাবাদর্শ, মতবাদ, দ্বন্দ্ব, বিরোধ, হিংসা। যেখানে সূচনা হয় ভালোবাসার। জন্ম নেয় ইতিহাসের বড় বড় কিংবদন্তীরা। যেখানে বেঁচে থাকা মানেই আনন্দ। যেখানে সেসব কিছু ঘটে যা আপনি দেখতে পান শুনতে পান। তার বাইরে এক বিশাল জগত যা আমরা শুধু কল্পনাই করতে পারি। যতটুকু পর্যন্ত হয়তবা কখনো পৌঁছানোই সম্ভব না। আমরা যতটুকু শুধুমাত্র কল্পনা করতে পারি তা যদি এই বাল্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হয় এবং এই বাল্বটিকে নিয়ে রেখে দেয়া হয় বামন গ্রহ প্লুটোর মাটিতে যার ব্যাস প্রায় ২৩৭০ কিলোমিটার তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার জানার জগতে বাইরে প্লুটোর মত একটা সুবিশাল জায়গা জুড়ে বা তারও বেশী অথবা অসীম জায়গা জুড়ে যা কিছু বিস্তৃত তা কল্পনা করবার মত ক্ষমতাও আমাদের নেই বা সে ক্ষমতা আমাদেরকে দেয়া হয়নি এবং সেখানে কি আছে বা কি ঘটে তা সম্পর্কে আমারা পুরোপুরি অজ্ঞ। তাহলে আমাদের জানা জগতের যে পরিসীমা যাকে আমরা ছোট একটা বাল্বের সাথে তুলনা করলাম সেটা কতটুকু? সৃষ্টি-জগত সম্পর্কে জানতে গিয়ে আপনি বিস্মিত হবেন না এমনটা হতেই পারেনা।
এ পর্যন্ত মোটামুটি ১২ জন ব্যক্তির সৌভাগ্য হয়েছে চাঁদের মাটিতে পা রাখার। বলা যায় মহাজাগতিক বস্তুগুলোর মধ্যে পৃথিবীর সবচাইতে কাছের বস্তু একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। তাহলে দূর দূরান্তে যেসব গ্রহ বা রাতের আকাশের যে তারা আমরা দেখি বা তারচেয়েও দূরে যা কিছু আছে সেখান পর্যন্ত এখনও কেন যাওয়া সম্ভব হয়নি? কি আছে সেখানে? কারা আছে সেখানে? আদৌ কি কেউ আছে? পৃথিবীই কি একমাত্র জায়গা যেখানে প্রাণ আছে, আমরাই কি একমাত্র সৃষ্টি যারা নিজেরদেরকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভাবি? যদি তাই হয় তাহলে কতটুকুই বা জানতে পেরেছি আমরা? কতটুকুই বা জানার সক্ষমতা আমাদেরকে দেয়া হয়েছে? উত্তর জানতে চলুন কল্পনা করার চেষ্টা করি সৃষ্টি-জগত কতটা বিশাল হতে পারে। কারণ এই সৃষ্টি-জগত আর সব সৃষ্টি নিয়ে জানা যেদিন শেষ হয়ে যাবে সেদিন নিশ্চই জানার মত আর কিছুই বাকি থাকবে না।
পৃথিবীতে বসবাসকারী জীব হিসেবে আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী বলা যায় চাঁদকে। কিন্তু রাতের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা এই চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিমি দূরে অবস্থিত। আমাদের পৃথিবীর সমান আরও ৩০ টি পৃথিবী পাশাপাশি সাজানো হলে তা চাঁদ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে। বিরতিহীন ভাবে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে একটি গাড়ি নিয়ে চাঁদ পর্যন্ত দূরত্ব পাড়ি দিতে আপনার প্রায় ১৬০ দিন সময় লাগবে। তবুও ১২ জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি এই দূরত্ব ভ্রমণ করে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছেন এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে এরাই পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ দূরত্ব পর্যন্ত ভ্রমণকারী ১২ জন মানুষ।

আপনি যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন তবে চাঁদে অবস্থানরত সময়ে পৃথিবীকে ঠিক ওপরের ছবিটার মত দেখতে পাবেন এবং যদি আপনি পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠাতে চান তবে আলোর গতিতে এই বার্তা পৃথিবীতে পৌছাতে প্রায় ২.৫০ সেকেন্ড সময় নিবে।
এমন একটি বস্তুর কথা চিন্তা করুন যা কিনা ১ সেকেন্ড সময়ে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। আপনি যতক্ষণে ১ সেকেন্ড কথাটি উচ্চারণ করছেন ততক্ষণে এই বস্তু ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলেছে। এই অবিশ্বাস্য গতিবেগের অধিকারী একমাত্র এবং একমাত্র বস্তু বা তরঙ্গ হচ্ছে আলো। আলোর গতিবেগের এই ব্যাপারটা একটু মাথায় রাখায় চেষ্টা করুন। কারণ কিছুক্ষণ পর যখন আমরা চাঁদ থেকে আরও একটু দূরের মহাজাগতিক বস্তুগুলোর দূরত্ব অনুধাবন করার চেষ্টা করবো তখন দিন, ঘণ্টা বা বছরের হিসেব না করে আলোকবর্ষ নামে একটি একক বিবেচনা করবো। সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল বেগে এই আলো বিরতি-হীনভাবে ভ্রমণ করে ১ বছরে যে দূরত্বে গিয়ে পৌছবে তা এক আলোকবর্ষ। তো এই বেগে চাঁদ থেকে আপনার পাঠানো বার্তা পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ২.৫০ সেকেন্ড সময় নেয়। তাহলে মঙ্গলগ্রহের মাটিতে অবতরণের পর আপনি যদি কোন বার্তা পৃথিবীতে প্রেরণ করতে চান তবে তা আলোর গতিতে পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় নিবে প্রায় ২০ মিনিট!

উপরের ছবিটি মঙ্গলগ্রহের মাটি থেকে তোলা পৃথিবীর একটি ছবি। মঙ্গলগ্রহের মাটি থেকে পৃথিবীকে ছোট একটি বিন্দুর মত দেখায়। সূর্যের চারপাশে আবর্তনরত থাকায় পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্ব কখনও একই থাকেনা। তবে গড় দূরত্ব বলা যায় প্রায় ২২৫ মিলিয়ন কিমি! এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব ৪০১ মিলিয়ন কিমি পর্যন্ত হতে পারে! তাহলে কোন মানুষ যদি মঙ্গলগ্রহের মাটিতে অবতরণ করতে পারে তবে চাঁদে অবতরণ করা ব্যক্তিদের চেয়ে ৯৮৬ গুণ দূরত্ব বেশি ভ্রমণ করতে হবে!!
ভয়েজার-১ নামের একটি স্পেস প্রোব নাসা থেকে ১৯৭৭ সালে নাসা থেকে মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয় আমাদের সৌরজগতের আরও খুঁটিনাটি তথ্য জানবার জন্য। যা এখনও ১৭ কিমি প্রতি সেকেন্ড বেগে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে পাঠানো বস্তুর মধ্যে সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রমকারী প্রায় ৪১ বছর যাবত ভ্রমণরত এই মহাকাশযান একই গতিতে চলতে থাকলেও শুধুমাত্র সূর্য আর তার চারপাশে অবস্থানরত গ্রহ নিয়ে যে সৌরজগত তা অতিক্রম করতে এর আরও ত্রিশ হাজার বছরেরও বেশী সময় লাগবে! শুধুমাত্র আমাদের সৌরজগতটাই এতটা বিশাল।

পৃথিবী থেকে দূরে সরে যেতে যেতে একবার পিছন ফিরে ভয়েজার-১ পৃথিবীর একটি ছবি তুলে পাঠায় আমাদেরকে। ছবিতে ছোট যে বিন্দুটি দেখা যাচ্ছে এটাই আমাদের পৃথিবী। যেন সূর্যরশ্মিতে ছড়িয়ে থাকা ছোট্ট একটি ধূলিকণা। এতটাই ক্ষুদ্র আমরা, আমাদের পৃথিবী। না, এতটাও না। আরও অনেক ক্ষুদ্র! আমাদের সৌরজগত ছেড়ে ধীরে ধীরে যদি আরও দূরে যেতে থাকি তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা তারাগুলো আমাদের সূর্যের মতই অন্য কোন নক্ষত্র। তাদেরকে ঘিরেও এমন অনেক গ্রহ মিলে তৈরি করেছে আরও অসংখ্য সৌরজগত। সূর্য বাদে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র আলফা সেন্টোরি যে কিনা ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বেগে চলতে থাকলে ঐ নক্ষত্র পর্যন্ত পৌঁছাতে ৪ বছরেরও বেশী সময় লাগবে! ভয়েজার-১ যদি বিরতি-হীনভাবে চলতে থাকে তবে ৭০,০০০ বছরেরও বেশী সময় লাগবে আলফা সেন্টরাই-কে অতিক্রম করতে।
তো এরকম অসংখ্য নক্ষত্র আর সৌরজগত মিলে তৈরি হয় বিশালাকার গ্যালাক্সি। আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে। যেখানে আছে আমাদের সূর্যের মত ১০০ বিলিয়নের বেশী নক্ষত্র এবং আমাদের পৃথিবীর মত ১০০ বিলিয়নের বেশী গ্রহ যার সঠিক সংখ্যা কেউ জানেনা। আমাদের মিল্কিওয়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব ১,০০,০০০ আলোকবর্ষ!!

উপরের প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমাদের পুরো গ্যালাক্সি উপর থেকে দেখলে সূর্য কে হয়তোবা দেখাই যাবেনা এমন ছোট একটা বিন্দুর মত দেখায়।

এ ছবিতে দেখানো হয়েছে আমাদের রেডিও সিগন্যালের বিস্তৃতি। এই ছোট নীল অংশ পর্যন্ত আমাদের রেডিও সিগন্যাল বিস্তৃত। তার মানে এই ছোট অংশের বাইরে যেকোনো বুদ্ধিমান প্রাণী বা সভ্যতা থাকলেও তাদেরকে বা তাদের পাঠানো কোন রেডিও সিগন্যাল অথবা তাদের গতিবিধি বা কর্মকাণ্ড কিছুই হয়তোবা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না। তবে এই নীল অংশের ব্যাস প্রায় ২০০ আলোকবর্ষ।
কিন্তু এই গ্যালাক্সিও বিশালতার দিক থেকে কিছুই না, যদি এর বাইরের জগত কতটা বিস্তৃত তা চিন্তা করা হয়। মিল্কিওয়ে সহ এরকম ৫৪ টি গ্যালাক্সি একত্রিত হয়ে তৈরি করে গ্যালাক্সির একটি লোকাল গ্রুপ যার বিস্তৃতি প্রায় ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ! এরকম ১০০ টির চেয়ে বেশী লোকাল গ্যালাক্সি নিয়ে তৈরি হয় বিশালাকার এক মহাজাগতিক গ্যালাক্সি-গুচ্ছ যার নাম ভার্গো সুপারক্লাস্টার। এর ব্যাস প্রায় ১১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ! কিন্তু এই সুপারক্লাস্টারও তেমন কিছুই না। এটি গ্রেট লানিয়াকেয়া সুপারক্লাস্টার নামক একটি বৃহৎ গ্যালাক্সি-গুচ্ছের ছোট একটি অংশ মাত্র। যেখানে আছে আমাদের গ্যালাক্সির মত ১০০ হাজারেরও বেশী গ্যালাক্সি! এর দু প্রান্তের ব্যাস প্রায় ৫২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। অথচ এই লানিয়াকেয়া সুপারক্লাস্টার পুরো মহাবিশ্বের তুলনায় একেবারেই ক্ষুদ্র এবং পুরোপুরি নগণ্য একটি অংশ। তাহলে এই মহাবিশ্ব কতটা বিশাল অনুমান করতে পারছি কি?

দিস ইজ দ্য ইউনিভার্স! দি অবজারভেবল ইউনিভার্স! এবং দেখতেই পাচ্ছেন আমাদের আলোচিত ভার্গো সুপারক্লাসটার পুরো মহাবিশ্বের তুলনায় ছোট একটি বিন্দু মাত্র! এই সেই মহাবিশ্ব যা ধারণ করে আছে ২ ট্রিলিয়নের বেশি সংখ্যক গ্যালাক্সি। সংখ্যায় দেখতে গেলে যা দাড়ায় ২,০০০,০০০,০০০,০০০ সংখ্যক গ্যালাক্সি! তাহলে পুরো মহাবিশ্বে সূর্যের মত নক্ষত্র কতটি আছে তা একটু ভাবার চেষ্টা করুন। পৃথিবী থেকে যেকোনো দিকে সোজাসুজি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বেগে যেতে থাকলে মহাবিশ্বের একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছতে প্রায় ৪৬.৫ বিলিয়ন বছর বা ৪৬,৫০০,০০০,০০০ বছর সময় লাগবে! তাহলে এই মহাবিশ্বের বাইরে যা কিছু আছে তার তুলনায় হয়ত এই মহাবিশ্বের আকৃতিও খুবই নগণ্য। আপনি নিশ্চিত থাকুন যতটুকু জিনিস বা যা কিছু সম্পর্কে আমরা জানি, জানা সম্ভব, জানতে পারবো বা অনুধাবন করতে পারবো তার সবকিছু এই মহাবিশ্বের গণ্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এর বাইরের জগত কতটা বিশাল হতে পারে বা কতটা সুন্দর হতে পারে, কি ঘটে সেখানে, কিই বা আছে তা জানা তো দূরে থাক কল্পনা করবার মত ক্ষমতাও আমাদেরকে দেয়া হয়নি। কারণ সেসব অকল্পনীয় স্থানগুলো এতটাই দূরবর্তী যে সেসব জায়গা থেকে আলো পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছাবার মত সময় বা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। পৃথিবী থেকে দূরবর্তী এমন সব স্থান আছে যেগুলো ক্রমশ আলোর বেগে আরও বেশী দূরে সরে যাচ্ছে। তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় পৃথিবীতে মানব সভ্যতা যতকাল যাবত টিকে থাকুক বা যত ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন অকল্পনীয় সংখ্যক এমন অনেক স্থান থাকবে যা সম্পর্কে জানা তো দূরের ব্যাপার কল্পনা করতে পারার মতও কোন সম্ভাবনাই নেই।
কসমিক ইনফ্লেশন থিওরি অনুযায়ী ধারণা করা যায় দৃশ্যমান বা পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের বাইরের জগত এই মহাবিশ্বের তুলনায় ১৫০ সেক্সটিলিয়ন গুণ বড়। যার মান সংখ্যায় দেখানো হলে ১৫০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ গুণ বড়!
ছোট একটা বাল্বের ভেতর আবারও এই মহাবিশ্বকে আবদ্ধ কল্পনা করুন। তার ভেতরে খুব ক্ষুদ্র একটা জায়গা জুড়ে আছি আমরা। আমরা যা দেখতে পারছি বা ভাবতে ভাবছি তা এই বাল্ব পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এই বাল্বটি যদি বামন গ্রহ প্লুটোর মাঝখানে রেখে দেয়া হয় তবে আমরা আসলে টেরও পাবোনা বা জানতেও পারবো না এর বাইরে প্লুটোর মত বিশালাকার কোন মহাজাগতিক বস্তু আছে বা তারও বাইরে অন্য কিছু আছে বা তারচেয়ে দূরে আরও দূরে অন্য কোন জগত আছে।
এতটাই ক্ষুদ্র আমরা! তবুও বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে আমরা মানুষেরাই বিতর্ক তৈরি করি “ইজ দেয়ার গড অর নট?” নানান যুক্তিতর্ক দিয়ে কিছু বিজ্ঞানীরাই আবার প্রমাণ করবার চেষ্টা করেন যে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। যে বিজ্ঞানকে,যে ক্ষুদ্র জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত এই বিশাল সৃষ্টির এবং সৃষ্টি জগতের রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত সেই সৃষ্টির কোন স্রষ্টা থাকবে না একথা যারা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চান এবং তাদের যুক্তিকেও যারা আবার সমর্থন করেন তারা বোধকরি মানুষ হিসেবে আমরা বা আমাদের জ্ঞান কতটা ক্ষুদ্র তা কখনো উপলব্ধি করতে পারেন নি। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টি জগতের অল্প কিছুটুকু মাত্র জানবার মত ক্ষমতাও যেখানে আমাদেরকে দেননি সেখানে কিভাবে মানুষ হয়ে এই ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে আমরা এটা প্রমাণ করতে চাই কিংবা কেউ কেউ বলেও ফেলেন “দেয়ার ইজ নো গড!” এই বিশাল সৃষ্টি, এই অনন্ত অসীম মহাবিশ্বের বিশালতা কতটুকু তা চিন্তা করতেই স্রষ্টার নিকট স্রদ্ধায় মাথা অবনত হয়ে আসে। এই অনন্ত অসীম মহাবিশ্ব, এই বিশাল সৃষ্টির পেছনে একজন স্রষ্টা অবশ্যই আছেন যিনি সবকিছুকে নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন।
অবশেষে, স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। কসমোলজির ( মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব) নানান রকম থিওরি এবং ব্যাখ্যা নিয়েও আছে অনেক মতবিরোধ। তবে বিখ্যাত দুজন পদার্থবিদ আবার শুধুমাত্র মহাবিশ্বের জটিলতা এবং বিশালতা দেখেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছেন।
পদার্থবিদ্যার রাজপুত্র স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেন “In the absence of any other proof, the thumb alone would convince me of God’s existence”
আর নোবেলজয়ী পদার্থবিদ অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেন-“The more I study science the more I believe in God”
অনেকের মতে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ হয়তো বিজ্ঞানের কাজ না বা চাক্ষুষ প্রমাণ ব্যাতীত কোন কিছুকে মনগড়া মতামত দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করাটাও বিজ্ঞানে খাটে না। একজন লেখক হিসেবে আমি বিজ্ঞানবর্তিকার প্রতিটি পাঠকের প্রতি, তাদের চিন্তাধারার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস অবিশ্বাস প্রত্যেকের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। লেখকের ভূল ত্রুটি এবং কোন মতামত দৃষ্টিকটূ মনে হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বিজ্ঞানকে ভালবাসুন, বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন।
References:
https://voyager.jpl.nasa.gov/
http://www.bbc.com/earth/story/20160610-it-took-centuries-but-we-now-know-the-size-of-the-universe
https://www.space.com/amp/24073-how-big-is-the-universe.html
Credit:
Youtube channel- RealLifeLore