বিশ্ব জলবায়ু এবং মহাসমুদ্রঃ মহাসমুদ্রের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক

“জলবায়ুর পরিবর্তন”, শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ হয়ত খুব কমই আছে। যদি সহজভাবে শব্দটির বিশ্লেষণ করি তবে বলা যায় যে পৃথিবীর পরিবেশের মধ্যে কোনো ধরণের পরিবর্তনের কারণের পৃথিবীর জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয় তাকে আমরা জলবায়ুর পরিবর্তন বলতে পারি।

ছবিঃ পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

বর্তমান পৃথিবীতে এটি অনেকটাই মহামারির মতো ছড়াচ্ছে। হঠাৎ করেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, মেরু অঞ্চল সহ বিভিন্ন জায়গায় গ্লেসিয়ারের গলে যাওয়া, বনভূমি পুড়ে যাওয়া, সাহারা মরূভূমিতে তুষারপাত, এমনকি মানুষের দ্বারা সৃষ্টি বিভিন্ন সমস্যাগুলোর জন্যই মূলত পৃথিবী আজকের রূপ নিয়েছে।

জলবায়ু কি?

অল্প কথায় যদি বুঝাতে চাই তবে বলতে হয়, জলবায়ু হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান আবহাওয়ার গড় মান। যেমন, আমরা প্রতিদিন যেসকল পূর্বাভাস পাই সেটি হচ্ছে প্রতিদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস। আবার প্রায় ৩০ বছর কিংবা ১০০ বছরের আবহাওয়ার তথ্য দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর জলবায়ুর পূর্বাভাস। একেকটি পরিবর্তন একেকটি সময়কালে অবস্থান নেয়।

ছবিঃ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ুকে সর্বোমোট ৬ টি আলাদা অঞ্চলে ভাগ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে;

  • মেরু অঞ্চলঃ মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা সবসময় হিমাংকের নিচে থাকে। অনেক সময় গড়ে -৪৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। অ্যান্টার্ক্টিকা, উত্তর মেরু, এবং গ্রীণল্যান্ড এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলটি সব সময় শুষ্ক থাকে (শুষ্ক বরফ)। এই জায়গায় কিছু শৈবাল ছাড়া কোনো ধরণের উদ্ভিদ জন্মায় না। তাছাড়া কিছু শ্বেত ভাল্লুক,পেঙ্গুইন আর তিমি দেখা যায়।
  • নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলঃ এই অঞ্চলটি মূলত ৩০ ডিগ্রী অক্ষাংশ থেকে ৬০ ডিগ্রী অক্ষাংশের মাঝে অবস্থিত। এই এলাকার ১৮-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস (গ্রীষ্মকালে)। এই এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস।
  • মরুভূমিঃ এই অঞ্চলটি বিশালাকারে উত্তর আফ্রিকায় দেখা যায় (সাহারা মরুভূমি)। এখানকার আবহাওয়া খুবই শুষ্ক। এমনকি এখানে মাটির নিচে পানি পেতে হলে প্রায় ১৮০ মিটারেরও বেশি খনন করা লাগবে। এছাড়াও মধ্য এশিয়া, উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া এসকল জায়গাও এই অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত।
  • ক্রান্তীয় অঞ্চলঃ এই অঞ্চলটিতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, সাথে প্রচুর উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজমান থাকেই। অতিরিক্ত আদ্রতার কারণের শরীরের ঘাম পর্যন্ত শুকোতে চায় না। পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ এই অঞ্চলের অধিবাসী। এখানে দিনে প্রায় ১২ ঘন্টা আলো পাওয়া যায়। সাথে সবসময় বর্ষাকাল লেগেই থাকে।
  • শান্ত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলঃ এই অঞ্চলের বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে কনকনে শীত এবং প্রচন্ড গরম দুটির অনুভূতি পাওয়া যায়। ভূমধ্যসাগরের চারপাশে অবস্থিত সকল দেশেই এর আবহাওয়ার প্রভাব বিরাজমান।
  • তুন্দ্রা অঞ্চলঃ এই অঞ্চলগুলো মূলত পাহাড়-পর্বতের উপরের জায়গাগুলিতে বেশি অনুভব করা যায়। উত্তর আমেরিকার আলাস্কা, সাইবেরিয়া এই তুন্দ্রা অঞ্ছলের উদাহরণ। (তথ্যসূত্রঃ Aurelio Locsin, com)

জলবায়ুর পরিবর্তন

পৃথিবী সৃষ্টির পর তার তাপমাত্রা অত্যাধিক ছিলো। যা পরবর্তিতে বিকিরণের মাধ্যমে আসতে আসতে ঠান্ডা হতে শুরু করে। এমনকি পৃথিবীতে প্রথম দিকের তাপমাত্রা ছিলো প্রায় ২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপর। তারপর থেকে যত সময় গড়িয়েছে সেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আবার বরফযুগের সময় তাপমাত্রা প্রায় -৬৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমেছিলো (উত্তর ইউরোপে)। সেই অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে দাড়িয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ Global Climate Report – March 2020, NOAA)

ছবিঃ জলবায়ুর পরিবর্তনের কাল্পনিক ছবি, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

আজকের এই পৃথিবী, আজ থেকে ২০০ বছর পূর্বেও এমনটা ছিলো না। তখনো মানুষ হাতে তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহার করতো। মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খনি থেকে জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তলন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি মানুষের চাহিদাও দ্বিগুণ হয়ে যায়। যার জন্য আমাদের প্রযুক্তির সহায়তায় বেশি বেশি জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তলন করতে হয়।

প্রযুক্তির উওন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের চাহিদার উপর ভিত্তি করে যে হারে প্রাকৃতিক জীবাশ্ম জ্বালানী এবং  খনিজগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে করে পৃথিবীর উষ্ণতা আগামীতে আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। খনি থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্মগুলো কার্বন বহন করে। সেই কার্বনকে পুড়িয়ে আমরা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে শুধুমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছি।

ছবিঃ অনবায়নযোগ্য শক্তি, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

এতে সমস্যা হতো না যদি না আমরা গণহারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না করতাম। বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ০.০৩৪%, যা গত ১৫ বছরের ফল (পূর্বে ০.০৩৩%)। আপনার হয়ত মনে হতে পারে এই ০.০০১% কি আসে যায়। ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি, স্পেনের মতো রাষ্ট্রগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন জলবায়ুর পরিবর্তন কতটা ভয়ানক হতে পারে।

মহাসমুদ্রের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক

আমাদের পৃথিবীর প্রায় ৭১ ভাগই জল দ্বারা বেষ্টিত। পৃথিবীর সকল সমুদ্রগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। বিশাল এই সমুদ্রগুলো পৃথিবীর বায়ু চলাচলের দিক, স্রোতের প্রবাহ, পানিতে খনিজের পরিমাণ, এমনকি পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

এখন স্বাভাবিকভাবেই জলবায়ুতে যদি কিছুটা পরিবর্তন ঘটে, তাহলে তার প্রথম প্রভাবটি সমদ্রে গিয়ে লাগবে। আপনাদের প্রশ্ন থাকতেই পারে কেন? কারণ আমরা তো দেখছি পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে, ভূমিতে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে ইত্যাদি। কিন্তু সমুদ্রের কথা ভেবেছেন কখনো?

ছবিঃ ফাইটোপ্লাংটন, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

আমাদের অনেকেই হয়ত এখনো জানে যে পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ৫০-৬০% সমুদ্র থেকেই আসে। পৃথিবীতে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তার ৫০% এর উপর সমুদ্র শোষন করে।  অবাক হচ্ছেন তাইতো?

অবাক হওয়ার তেমন কিছুই নেই। পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিলো এই সমুদ্রগুলোতেই। একদম ছোট  ছোট ফাইটোপ্লাংটন থেকে শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি তিমির বসবাস এই মহাসমুদ্রের মাঝেই।

ছবিঃ শক্তির উৎস সমুদ্র, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

সমুদ্র এবং মহাসমুদ্রে অবস্থিত এইসকল ছোট ছোট ফাইটোপ্লাংটন থেকেই অক্সিজেনের যোগান আসে। একইভাবে ভূমিতে অবস্থানরত বড় বড় গাছের মতো তারাও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে থাকে। মহাসমুদ্রের আয়তন বিশাল হওয়ায় এতে ফাইটোপ্লাংটনের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। যার কারণে সমুদ্রের অবদানটাও একটি বেশি। (তথ্যসূত্রঃ Life in the ocean, National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA))

কিন্তু এতো কিছু থাকা সত্ত্বেও কেন জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে? অল্প কিছু তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখিয়ে দিতে পারবো কেন এমনটি ঘটছে।

মহাসমুদ্রের দুষণ

২০১৫ সালে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি প্রকাশনীতে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে, প্রতি বছর প্রায় ৪.৮-১২.৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক মহাসমুদ্রগুলিতে প্রবেশ করে। এদের বেশির ভাগই হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে অবস্থিত সমুদ্রে। (তথ্যসূত্রঃ National Geographic.com)

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর মহাসমুদ্রগুলিতে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন (একক) প্লাস্টিক ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। ২০২০ সালের শেষ তথ্য অনুযায়ী যার ভর দাঁড়ায় প্রায় ৭ মিলিয়ন টন। তার মধ্যে ২৬৯,০০০ টন প্লাস্টিক উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ National History Museum)

ছবিঃ প্লাস্টিক দূষণ, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

তাছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ অপচনশীল আবর্জনা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো একসময় সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে গিয়ে জমা হয়। আবার অনেক দেশ তাদের পরিত্যক্ত জাহাজগুলো সমুদ্রের নিচে আবর্জনা হিসেবে ফেলে রেখে চলে যায়।

অনেক সময় জাহাজ দুর্ঘটনায় বা তেলের খনির কোনো ধরণের ফাটল অথবা অব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্রে তেল (পেট্রলিয়াম) ছড়িয়ে পড়ে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই ৫ টি ঘটনা ঘটেছিলো যার বেশির ভাগ ছিলো উন্নত দেশগুলোর নাম। আবার ২০১৮ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ১৩৭ টি তেল দুর্ঘটনা ঘটে। (তথ্যসূত্রঃ John P. Rafferty, Brittanica.com)

ছবিঃ জাহাজ দুর্ঘটনায় ভাসমান তেল, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

এখন আপনাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এসকল কর্মকান্ড সমুদ্রে ঘটে থাকলে ভূমিতে অবস্থানরত মানুষের সাথে কি সম্পর্ক রয়েছে? আমি প্রথম দিকেই উল্লেখ করেছিলাম যে সমুদ্রের সাথে জলবায়ুর একটি সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সমুদ্রের অনেক অবদানও রয়েছে। কিন্তু এই সকল দূষণের জন্য সমুদ্রের অপরীহাজ্য একটি জীব মারা যাচ্ছে। ফাইটোপ্লাংটন, সারা পৃথিবীর ৫০% এর উপর অক্সিজেনের যোগানের উৎস। আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সর্বোচ্চ শোষণকারী জীব। এখন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করার জন্য যদি কোনো উদ্ভিদই না থাকে তাহলে অক্সিজেন আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি পৃথিবী উষ্ণ হবে না?

প্লাস্টিক কিংবা তেলের জন্য উদ্ভিদগুলো বেচে থাকতে পারে না। কারণ উদ্ভিদের বেচে থাকার জন্য সূর্যের আলো অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তেল/প্লাস্টিকের একটি স্তর থাকার দরুন উদ্ভিদগুলো সূর্যের আলো পাচ্ছে না। এতে করে উদ্ভিদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যহত হচ্ছে। যার কারণে পুরো প্রভাবটুকু সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলেও দেখা দেয়।

শুধুই কি তাই? সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। বাতাসের দিকের পরিবর্তন হচ্ছে। পূর্বের ন্যায় এখন নির্দিষ্ট সময় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। যেখানে সবসময় গাছগাছালি দিয়ে ভরে থাকত সেখানে এখন খরা নেমেছে। যেখানে নদীর পানি কখনই বিপদ সীমা অতিক্রম করতো না, সেখানে ঘর-বাড়ি নিয়ে স্রতের টানে ঘা ভাসাচ্ছে। যেই জায়গায় স্বাভাবিক সময়ে শীত থাকার কথা সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আর যেখানে সবসময় বৃষ্টি লেগেই থাকে সেখানে এখন খরা চলছে।

পৃথিবীতে যে ৩টি সেল (হেডলি, ফেরেল, পোলার সেল) বা ঘরের উপর নির্ভর করে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বর্ষাকালের আবির্ভাব ঘটত, তা আজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওজন স্তর ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে অতিবেগুনী রশ্মি, গামা রশ্মির মতো মারাত্মক রশ্মিগুলো পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। এগুলো যেমনটি মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক, তেমনি পরিবেশকেও করে চেলেছে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর। (তথ্যসূত্রঃ Hadley and ferrel cell, Junling Huang and Michael B. McElroy (2014))

পৃথিবী যত উষ্ণ হচ্ছে, তার সাথে মেরুতে বরফ গলনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরফ গলিত পানি অনেক বেশি প্রভাব না ফেললেও উপকূলীয় নিচু অঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। আবার বরফ গলে যাওয়ার ফলে ঐ এলাকায় অবস্থানরত প্রানিকুলের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।

সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বসবাস করে। এসকল মানুষগুলোর জীবন দ্বারা সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ মৎস শিল্পের উপর নির্ভর করে বেচে থাকে। আর এখান থেকেই কোনো রাষ্ট্রের অন্তঃবর্তি শহরগুলির চাহিদা মেটানো হয়।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঐ সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ পানির বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে এলাকা ভিত্তিক যে মৎস উৎপাদন ব্যবস্থা ছিলো তা ক্রমাগত কমতে থাকে। কারণ পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে মাছ এবং অন্যান্য জীবগুলো ঐ জায়গা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়, যেখানে মাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে।

ছবিঃ টুনা মাছ, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

শুধুমাত্র তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর অনেক প্রবাল প্রাচীর আজ বিলুপ্ত। আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে, প্রবাল প্রাচীর পৃথিবীর অন্যতম বাস্তুসংস্থান। পৃথিবীর বিলিয়ন ডলারের মৎস সম্পদগুলো এই প্রবাল প্রাচীরকে ঘীরেই তৈরি হয়।

ছবিঃ মৃত প্রবাল, ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি বড় উদাহরণ হচ্ছে “এল-নিনো” এবং “লা-নিনা”। এল-নিনো এবং লা-নিনা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি দুইটি জলবায়ুর উৎস যা পূর্ব এশিয়া এবং দুই আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। এটি স্বাভাবিকভাবে ৩-৭ বছরের মধ্যে একবার সংঘঠিত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি, এই দুইটি জলবায়ুর গতি অনেকটা ত্বরান্মিত হয়েছে। যার ফলে চীন সাগরে মাছের পরিমাণ কমে গিয়েছে। আবার আমেরিকায় প্রতি বছর বন্যা দেখা দিচ্ছে। এইসকল ক্ষেত্রেও সমুদ্রের কিছুটা প্রভাব রয়েছে যা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট। (তথ্যসূত্রঃ

আমাদের করণীয় কি হতে পারে?

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত উদ্বোগগুলি বৃদ্ধি করার সাথে সাথে মহাসাগর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ককে অবশ্যই স্বীকৃতি দেওয়া, বোঝা এবং সরকারী নীতিগুলিতে এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া সমুদ্র দুষণ বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ সমুদ্র দূষিত হলে আমাদের পরিবেশ দূষিত হবেই।

আমাদের চারপাশে যে বাস্তুসংস্থাগুলো দেখা যায়, তা কোনো না কোনো ভাবে সমুদ্রে গিয়ে মিশে যায়। তাই এইসকল বাস্তুসংস্থানগুলো বিভিন্ন আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা আমাদেরও একটি দায়িত্ব। যে সকল দেশগুলো সমুদ্র/মহাসমুদ্র দূষণের জন্য দায়ী, তাদের উচিত এই ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া। আর অনাবায়নযোগ্য পদার্থ ব্যবহার কমিয়ে নাবায়নযোগ্য শক্তিশালী উৎসের খোজ করা।

“আপনি যদি সমুদ্রকে আঘাত করেন, তবে সমুদ্রের কিছু যায় আসবে না। কিন্তু সমুদ্র যদি আপনাকে আঘাত করে, তবে আপনার হারানোর মতো আর কিছু বাকী থাকবে না”

আল্লাহ হাফেজ

ম্যাক্সিকোতে অতি সুরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেল প্রাচীন ম্যামোথের অস্থিসমূহ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>