Titan : শনির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ

সৌরজগৎ -এ সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় গ্রহ শনি এবং এই গ্রহের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল টাইটান। এবং এটি আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ। টাইটান তার নিজ গুনে নিজেকে বিজ্ঞানীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।


গ্রীক দেবতা এবং বীর এর নাম ছিল টাইটান। দেবতা টাইটানের নামানুসারে এই উপগ্রহটির নাম দেয়া হয় টাইটান। টাইটান সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৬৫৫ সালে। এবং আবিষ্কার করেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স।

১৯৯৭ সালে ক্যাসিনি (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণ করা হয় ।ক্যাসিনি মিশন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল শনি গ্রহ এবং এর উপগ্রহ গুলো নিয়ে গবেষণা করা। এই ক্যাসিনি থেকে পাওয়া যায় টাইটান সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য । টাইটানের আকৃতি এলিপসয়ডাল বা উপবৃত্তীয় গোলক। টাইটানের ব্যাস চাঁদের ২ গুণ এবং ভর চাঁদের ১.৮ গুণ। আয়তনে এটি বুধের চেয়েও বড়। এটি মাত্র ১৫ দিন ২২ ঘণ্টা সময়ে শনিকে প্রদক্ষিণ করে।
এই উপগ্রহ-এর রয়েছে গ্রহের মত সমতল পৃষ্ঠ । উপগ্রহটির পৃষ্ঠ ৬০ শতাংশ পাথুরে আর ৪০ শতাংশ পানি দিয়ে তৈরি। বলা হয়,যদি এটি শনি গ্রহকে পরিক্রমণ না করত,তাহলে এটি আস্ত গ্রহের মর্যাদা পেত। পৃথিবীর বাইরে টাইটানই সৌরজগতের এমন একটা স্থান যেখানে রয়েছে পৃথিবীর মতো পুরু নাইট্রোজেন পূর্ণ বায়ুমণ্ডল ।টাইটানের বায়ুমণ্ডলে ৯৮.৪% নাইট্রোজেন, ১.৪% মিথেন রয়েছে। টাইটানের বায়ুমণ্ডল তার পৃষ্ঠ থেকে ৬০০ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাণের প্রথম শর্ত হল জৈব যৌগ , যার কমতি নেই টাইটানে । পৃথিবীতে যেমন পানি চক্রাকারে আবর্তিত , তেমনি টাইটানে হয় মিথেন চক্র । টাইটানে মিথেন তিন অবস্থায় থাকে আমাদের পৃথিবীর পানির মতো। আমাদের পৃথিবীর বৃষ্টির মতো সেখানে হয় মিথেনের বৃষ্টি , এবং সেখানে পৃথিবীর মতো বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়। মিথেনের মতো গ্রিন হাউস গ্যাসের উপস্থিতি থাকায় টাইটানের বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকের চেয়ে উত্তপ্ত। টাইটানে রয়েছে মিথেন-ইথেনের সুবিশাল হ্রদ, নদ, সাগর। টাইটানের দুই মেরু অঞ্চলেই লেক আর সাগর বেশি দেখা গেছে। এর পৃষ্ঠের ঘূর্ণনকালে ১০ মিটার উঠা- নামা করে। এটির ব্যাখ্যা হিসাবে বলা হয় ভূমণ্ডলীয় সাগরের উপর ভেসে আছে বরফ শেল। আর সাগরটি লোহিত সাগরের চেয়েও বেশি লবণাক্ত হতে পারে বলে আশা করছে বিজ্ঞানীরা। এই সাগর মোটামুটি ১০০ কিলো-মিটারের বেশি গভীর নয়। টাইটানের একটা সাগরের নাম লিজিয়া-মার, যার গড় গভীরতা ২০-৪০ মিটার। আর দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নদী। এই নদীটি পৃথিবীর নীল নদের চেয়েও দীর্ঘ। এই নদটি মিলিত হয়েছে লিজিয়া-মার সঙ্গে। টাইটানে বিষুবীয় অঞ্চলের কাছাকাছি বড় বড় পাহাড় – পর্বত পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলের নাম দেয়া হয়েছে ঝানাডু । আমাদের পৃথিবীর বালু কোয়ার্টজ এর তৈরি আর টাইটানের বালুতে আছে প্রচুর হাইড্রোকার্বন।


সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ফলে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিক মিথেন ভেঙ্গে মুক্ত র‍্যাডিকাল বা যৌগমূলক তৈরি করে । তারপর সেখানে অ্যাসিটিলিন, ডাইঅ্যাসিটিলিন, সায়ানোঅ্যাসিটিলিনসহ নানা রকম জৈব যৌগ তৈরি হয় । বিজ্ঞানীরা দাবি করেন এই পদ্ধতিতে জটিল জৈব যৌগ তৈরি হতে পারে।
টাইটানের বায়ুমণ্ডল এর বেশ উপরে পাওয়া গেছে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রো-কার্বন! ২০১৪ সালে টাইটানে প্রোপেন শনাক্ত হয়। এই প্রথম পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রোপেন পাওয়া গেল। এই থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন , পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা যেমন ছিল, টাইটানের অবস্থা ঠিক তেমনি। শুধু পার্থক্য হল এটা যে টাইটানে পানির বাস্প নেই। টাইটানে কোনো ধরনের প্রাণী আছে কি না এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। তাই টাইটানের মাটিতে এক আলাদা প্রকারের জীবের কল্পনা করা হচ্ছে। যেমন আমাদের পৃথিবীতে জলের মধ্যে জলজ প্রাণী রয়েছে, ঠিক তেমনি টাইটানেও মিথেনের নদীতে মেথিনোজেন জীবনের কল্পনা করা হচ্ছে। নাসার বিজ্ঞানীদের অনুমান সেখানে যদি প্রাণ থাকে তাহলে তারা অ্যাসিটিলিনকে খাবার এবং হাইড্রোজেন কে নিঃশ্বাসের জন্য ব্যবহার করে থাকে। পৃথিবীর প্রাণীরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। হয়তো সেখানকার প্রাণীরা মিথেন ত্যাগ করে। সেখানে কোনো প্রাণী বা কোনো ধরনের অণুজীব আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে নাসা ২০২০ সালে টাইটানে একটি রোবোটিক মিশন পাঠাতে যাচ্ছে।

Comments are closed.