আমরা প্রায়সময়ই টেলিভিশনে নানারকম পরিষ্কারক প্রসাধনী, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদির বিজ্ঞাপনে দেখি সেগুলো অত পার্সেন্ট জীবাণু ধ্বংস করে, তত পার্সেন্ট ব্যাকটেরিয়া আর অণুজীব ধ্বংস করে ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটকথা হল আমরা, অন্তত আমাদের সভ্যতার আধুনিক বা শহুরে (Urban) অংশ আমাদেরকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতার যুগে নিয়ে চলে এসেছে। এখানে আমরা সবকিছুতেই পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন। কোনো মা তার বাচ্চার খাবার চুষনি মাটিতে পড়ে গেল দেখে তা পরিষ্কার না করে ফেলেই দিবে। কোনো মা আবার রোগ জীবাণু আক্রমণ করবে সেই ভয়ে সন্তানকে কাদামাটি মাখামাখি, কাচামাটির মাঠে খেলাধুলে থেকে বিরত রাখে। অনেকে তো ফিল্টার ছাড়া একফোঁটা পানিও পান করেনা। ভাল পানির সাপ্লাই থাকলেও না। যেন তা বিষ! অনেকে খাবারের পর অতি পরিচিত এ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল লিকুইড সোপ হাতে মেখে একেবারে ‘দে ঘষা’র মত অবস্থা করে। অনেকের একেবারে নির্দিষ্টধরণের সাবানই প্রয়োজন পড়ে, বাইরে থেকে ঘরে ফিরলেই এসের গোসল করা ফরজ! কারণ শরীরে রোগজীবাণু (!) লেগে থাকে!
আরো কত কি ব্যাপার রয়েছে!
কিন্তু কথা হল, এইযে এই অতি অতি পরিচ্ছন্নতা, তা আসলে কতখানি উপকারী? তা কি আসলেই আমাদের দেহের সব রোগজীবাণু ধ্বংস করে দিয়ে একেবারে আমাদের সুপারম্যান বানিয়ে দিচ্ছে? আমাদের থেকে সকল রোগবালাইকে সহস্র ক্রোশ দূরে সরিয়ে দিচ্ছে? নাকি এরা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক অণুজীবকেও গণহারে ধ্বংস করে দিচ্ছে? চলুন বাকিটা জেনে আসা যাক!
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিঃস্বন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷
যখন থেকে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে খানিক আলাদা হয়ে উন্নত সভ্যতা গড়ে বসবাস শুরু করেছি, তখন থেকেই প্রকৃতির সাথে একেবারে গায়ে গতরে মিশে থাকার অনেক প্রক্রিয়াই আমাদের দেহ সময়ের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী প্রজন্মে লোপ পেয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের রোগজীবাণুর সাথে লড়াই করার জন্য যেগুলো প্রয়োজন নেই সেই অণুজীবগুলোর অনেকখানিই বিলোপসাধণ হয়েছে। কিন্তু ঘরবাড়িতে থাকলেও আমরা প্রকৃতির অংশ এবং আমাদের প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ততায় আসা লাগেই। তাই আমাদের মাঝেও বহু রোগ বালাইয়ের প্রকোপ হয়েছে যার ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়াটা এবং থাকাটা আমাদের জন্যে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। মোদ্দাকথায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সভ্য মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু এর মানে কিন্তু এই না যে আমাদের পরিষ্কার থাকতে গিয়ে সমস্ত অণুজীবই ধ্বংস করার লড়াইয়ে নেমে পড়তে হবে।
আমাদের দেহে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া তথা অন্যান্য অণুজীব আর বহিরাগত অণুজীব সব মিলিয়ে এরা আসলে দুধরণের হয়।
১৷ ক্ষতিকারক অণুজীব, যেমন বিভিন্ন ফ্ল্যু, বোভিন, ক্যাম্পিলোব্যাক্টার ইত্যাদি আরো অনেক।
২. উপকারী অণুজীব। এগুলো আমাদের দেহের বিভিন্নধরণের কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে আর দেহকে ক্ষতিকারক অণুজীবগুলোর সাথে লড়াই করে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি বহু উপকারী অণুজীবও আছে যেগুলোর উপর গোটা পরিবেশের বাস্তুসংস্থান এর ভারসাম্য রক্ষা করে।
তো কথা হল, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বেচে বা টিকে থাকতে হলে আমাদের ক্ষতিকারক অণুজীবগুলোর ব্যাপারে লড়াই করতে হবে এবং সাবধানও থাকতে হবে। এর আপাতত তেমন কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেকাজ করতে গিয়ে যদি আমরা শত্রুপক্ষের অণুজীবগুলোর সাথে সাথে মিত্রপক্ষের, মানে আমাদের জন্যে উপকারী অণুজীবদেরও মেরে ফেলি, তাহলে তো ব্যাপারটা উলটো হয়ে গেল। ব্যাপারটা যেন শুত্রুর ব্যারাকে হামলা করতে করতে রাগে অন্ধ হয়ে নিজেদের ব্যারাকই ধ্বসিয়ে দেয়া!
মূলত এই ধারনাটি এসেছে আরেকটি ধারণা থেকে যার নাম হাইজেনিক হাইপোথিসিস (Hygienic Hypothesis) এবং যে ধারণার গোড়াপত্তন উনিশ শতকের শেষের দশকে। এই হাইপোথিসিসের মতে একেবারে শিশু বয়সে সংক্রমণজনিত রোগবালাই বাচ্চাদের কম হলে বা সেগুলো হওয়ার হাত থেকে বিভিন্নভাবে বাচ্চাদের রক্ষা করা হলে (বেশি পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতা বজায় রেখে শিশুকে রোগবালাই এর সংক্রমণ থেকে অনেক বেশি বাচিয়ে বাচিয়ে রাখা) পরবর্তীতে সেইসব শিশুদের আরো বড় বড় রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হবার ঝুকি আর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এদের পরবর্তীতে বড় বড় সমস্যায় ভোগার মাত্রা আর ঝুঁকি তাদের থেকে অনেক বেশি থাকে যারা ছোটবেলায় সাধারণভাবেই অনেকের মত নানারকম রোগবালাই এ ভুগেছে এবং যাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা দিয়ে বড় করা হয়নি!
প্রচলিত এই হাইজিন হাইপোথিসিস এর সূত্র ধরে একাধিক অধ্যয়নে পরবর্তীতে উঠে এসেছে অবাক করা বহু বিষয়। দেখা গেল, প্রয়োজনের চাইতে বেশি পরিচ্ছন্নতা আমাদের জন্যে ক্ষতিকর অনেক অণুজীবকে ধ্বংস করলেও সাথে আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় ভারসাম্য ধরে রাখা থেকে শুরু করে পরিপাক ক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেক প্রয়োজনীয়, উপকারী অণুজীবকেও হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। আর সেগুলো হুমকির মুখে পড়া মানে হচ্ছে আমাদের দেহ নিজেও নানারকম রোগবালাই এর হুমকিতে পড়া৷
এতে করে তাদের শরীর প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার অভাবে বড় রকমের ঝুঁকিতে পড়ছে। অপরদিকে বিভিন্নরকম পরিষ্কারক সামগ্রীর অতি ব্যবহার শুধুমাত্র আমাদের দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকারী অণুজীবিকে ধ্বংস আর আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে হুমকির মুখেই ফেলছে না, সাথে এগুলো আমাদের জীবনে খুব বড়রকমের, এমনকি প্রাণঘাতী রোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একটা সাধারণ ব্যাপারই তুলে ধরা যাক!
আমাদের মধ্যে যারা কল বা ট্যাপের সাধারণ পানি (অনেকের ভাষায় কাঁচা পানি) খায়, তারা কিন্তু পানির মাধ্যমে ঘন ঘন রোগবালাইয়ে ভুগছেনা। আবার এরা প্রয়োজনে ফিল্টার পানিও খেতে পারছে, রাস্তার পাশে হোটেলের পানি খেয়েও হজম করতে পারছে। কিন্তু চিন্তা করুন একবার একেবারেই ফিল্টারের পানি খেয়ে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা যারা, তারা কিন্তু একটা কৃত্রিম উপাদানের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। তারা কলের পানি বা কাঁচা পানি, রাস্তার পাশের হোটেলের পানি খেলে তা হজম করতে পারছেনা!
এ বিষয়ে Dr Brett Finlay এর মতামত এরকম যে –
পরিচ্ছন্নতার প্রতি অবসেশন (অস্বাভাবিক ঝোঁক) হয়তো আপনার রেচনতন্ত্রে (Gut) থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির কাতারে ফেলে দিতে পারে।
কানাডায় করা এক অধ্যয়ন থেকে পাওয়া তথ্যমতে ১০০দিন বয়স বা তার কম বয়েসী বাচ্চাদের রেচনতন্ত্রে ৪ ধরণের উপকারী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে, যা পরবর্তীতে তাদের দেহকে হাপানী (Asthma) রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ব্যাপারটা যাচাই করে নিশ্চিত হবার জন্যে গবেষকরা একই অধ্যয়ন ইকুয়েডরেও চালায়, যেখানে গড়ে প্রতি একশ জনে দশ জন হাপানী রোগী!
অদ্ভুত ব্যাপার হল তারা সেখানেও একইরকম ফলাফল পায়। এছাড়াও আরো দুটি বিষয় যা তাদের অবাক করে দেয় তা হল রেচনতন্ত্রে থাকা একধরণের ইস্ট (Yeast), আর পরিষ্কার পানি, যার দুটোই তাদের মাঝে হাপানীর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়!
British Columbia University’র Dr. Finlay আরো বলেন যে, “কঠিন বাস্তবতা এটাই যে, একেবারে পরিষ্কার পানি তাদের মাঝে হাপানীর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।”
তিনি আরো বলেন যে, “আমি মনে করি এটার যৌক্তিকতা রয়েছে (উপকারী ব্যাকটেরিয়ার স্বল্পতার সাপেক্ষে) কিন্তু আমি অবশ্যই এটাও মানি যে সেটা জেনে আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম।”
এছাড়াও তিনি অতি পরিচ্ছন্নতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “আমি বলবো আমরা অতি পরিচ্ছন্নতার নেশায় ভুগছি। আমরা আমাদের দুনিয়াটাকে বেশিই পরিষ্কার করে ফেলেছি।”
তবে তাই বলে যে সব অপরিচ্ছন্নতাকে মাথায় তুলে নিয়ে নাচতে হবে তাও কিন্তু নয়। ডাঃ ফিনলে এব্যাপারটাও তুলে ধরেছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ” এমনও মানুষ আছে যারা জৈববর্জ্য সংরক্ষণ (Biobanking) করে। আমি বলছিনা যে আপনারা মল সংরক্ষণ করুন আর তা আপনাদের নাতি নাতনিদের কাছে পৌঁছে দিন।”
আমাদের দেহে উপকারী অণুজীবদের অবদানের কথা বলতে গিয়ে Becker Professional Education School এর অণুজীববিজ্ঞানী ও ইন্সট্রাক্টর Mary Ruebush বলেন, “অণুজীবেরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এ্যালার্জি, অটিজম, স্বতঃস্ফূর্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমরা, মনের অবস্থা আর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের সাথেও সম্পৃক্ত!”
তো ভাবুন একবার, অতি পরিচ্ছন্নতার জন্যে আমাদের দেহের এইসব উপকারী অণুজীবেরাও যদি ধ্বংস হওয়া শুরু করে, তাহলে তার কেমন বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে আমাদের দেহের উপর!
এমনকি দেখা গেল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যোনিপথ থেকে (Vaginally) যেসব বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে, গড়ে তাদের এ্যালার্জি আক্রান্ত হবার সংখ্যা সিজার বা সি সেকশন এ হওয়া বাচ্চাদের চাইতে মেলা কম। এবং অধ্যয়ন করে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে যোনিপথে বেরুনোর সময় দেহে যাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোর অভাবকে। যা মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্যে অনেক বেশি উপকারী। শুধু যে উপকারী তা নয়, বরঞ্চ তার প্রভাব আজীবনবিস্তৃত…!
University College London এর Epidemiologist ডাঃ Graham Rook এইসব অণুজীবদের আমাদের “পুরনো বন্ধু” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রুকের মতে, আমরা এদের (এসব ব্যাকটেরিয়া আর রেচনতন্ত্র) বন্ধুত্বের অভাববোধ করি। কেননা মাত্রাতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা মানে হচ্ছে আমরা এদের সাথে তেমনভাবে সংস্পর্শে আসছিনা, যেমনটা আমাদের পূর্বপুরুষেরা আসতো।”
আমাদের বেশিরভাগ রোগবালাইয়ের মাধ্যম হিসেবে বিজ্ঞানীরা আমাদের হাতের অপরিচ্ছন্নতাকে দায়ী করেন। সারাদেহের নয়। কেননা বেশিরভাগ সংক্রমণই হয় আমাদের হাত দিয়ে খাবারের মাধ্যমে বা সরাসরি আমাদের মুখ ও দেহের অভ্যন্তরে গিয়ে।
তাই গোসলের বেলায় সারা দেহ যতটানা ভালভাবে সাবান লাগিয়ে রেখে পরিষ্কার করা দরকার, তারচে বেশি দরকার দুই হাত পরিষ্কার রাখার।
পরিষ্কার থাকার ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা দিতে গিয়ে London School of Hygiene and Tropical Medicine এর ডাঃ Sally Bloomfield বলেন,
“বাড়ির আশেপাশে থাকা জীবাণুদের সাথে লড়াইয়ের জন্য আমাদের জরুরী নয় যে খুব বেশি বেশি করে পরিষ্কার হওয়া, বরঞ্চ সময় মত পরিষ্কার হওয়া। সুপরিচ্ছন্নতা মানেই এই নয় যে সপ্তাহে একবার ঘষে মেঝে ভালভাবে পরিষ্কার হওয়া, বরঞ্চ এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিষয় হওয়া উচিত যেখানে পরিষ্কার হবার ব্যাপারটা নির্ভর করবে কোথায় আর কতটুকু পরিষ্কার হওয়া দরকার। “
আবার যেমন রান্নাঘরে শাকসবজি তুলে এনে কেটে রেখে হাত না ধুয়ে থাকাটা যতটা নিরাপদ, মাছ মাংসের বেলায় তা ততটা নিরাপদ না। কেননা মাংসে ফুড পয়জনিং ঘটানোর মত Campylobacter নামের অণুজীব থাকে।
আবার ঘামে ভেজা বিছানার চাদর, স্যাতস্যাতে গামছা আর পোশাক, এগুলোও ক্ষতিকারক সব অণুজীবের বাসা বাধার জন্যে স্বর্গস্বরুপ… – ক্লোভারফিল্ড এর মতামত।
উপকারি অণুজীবেরা আমাদের বেশ পরিচিত গ্রামের কাদামাখা আঙিনা, মেঠো পথের পাশে কাঁচামাটি এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে থাকে। এবং আমাদের সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মকে এগুলোর সংস্পর্শে থাকারও নির্দেশ দেন অনেক বিশেষজ্ঞরা।
এবিষয়ে বলতে গিয়ে Finland এর University of Helsinki এর জীববিজ্ঞানী Ilkka Hanski বলেন, “ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের গাছপালা আর বনাঞ্চলের সাথেও খেলা করা উচিত। আপনার সন্তানদের এমন জায়গাগুলোতে খেলতে দিন যেখানে তারা কাঁচা মাটি আর ঘাসপাতা সংস্পর্শে আসতে পারে, যা খুব উপকারী অণুজীবে ভরপুর।”
তিনি আরো বলেন, যে “যদি আপনাদের নিজেদের বাড়ি থাকে, সেখানে লন মেনে চলার দরকার নেই। আশেপাশের গাছপালাগুলোকে যেভাবে বেড়ে উঠুক, উঠতে দিন। এবং তাদেরকে বড়জোর দুই এক বছরে একবার ছাঁটুন।
অপরদিকে University of Michigan School of Public Health Study এর করা এক গবেষণা থেকে উঠে আসে যে বিভিন্নরকম পরিষ্কারক সামগ্রী, যেমন সাবান, টুথপেস্ট, কলম, ডায়পার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত Triclosan নামক পদার্থের কারণে আমাদের মাঝে এলার্জিতে আক্রান্ত হবার হার বেশি দেখা যায়।
অথচ মানুষ তা প্রতিনিয়তই ব্যবহার করে চলেছে সারাদেহে!
তোহ্, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে অনেক অণুজীব আমাদের জন্যে ক্ষতিকর হলেও আমাদের দেহে বাস করা আর মাটির, ঘাসের কাছে থাকা বহু অণুজীব আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই আমাদের নিয়মিত পরিষ্কার হবার পাশাপাশি সঠিকভাবে পরিষ্কার হওয়াটা খুবই জরুরী।
তাইতো দেখবেন, আধুনিক সভ্যতার চারদেয়ালের মাঝে অতি আহ্লাদে অতি পরিচ্ছন্নতায় বেড়ে ওঠা কোনো ছেলের চাইতে আমাদের গ্রাম বাংলার মাঠে ঘাটে খেলে, বৃষ্টিভেজা কাদামাখা প্রাঙ্গণে লুটোপুটি খেয়ে খেলেধুলে বড় হয়ে ওঠা বাচ্চারা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অনেক বেশি তাগড়া, দক্ষ আর অধিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম।
আজ তাহলে এপর্যন্তই। পরেরবার ফিরবো হয়তো আবারো কোনো ভিন্ন বিষয় নিয়ে, আপনাদের মাঝে।
ততক্ষণ, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর নিজের খেয়াল রাখুন।
বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন…
তথ্যসূত্রঃ
https://www.eurekalert.org/pub_releases/2010-11/uom-sst112410.php
http://www.bbc.com/future/story/20151118-can-you-be-too-clean
https://www.independent.co.uk/news/science/asthma-clean-water-allergies-hygiene-hypothesis-cleanliness-friendly-bacteria-yeast-a7586201.html?amp