চলতি বছরের MIT তাদের বর্তমান প্রযুক্তির একটি শর্টলিস্ট উন্মোচন করেছিল বিশ্ববাসীর কাছে যেখানে যুগান্তকারী ১০ টি প্রযুক্তির কথা ছিল। প্রযুক্তিগুলোর ব্যাপারে পরে অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বিখ্যাত ম্যাগাজিন Forbes এও প্রকাশ করা হয়।
যারা MIT’র নাম এখনো জানেন না তাদের বলে রাখি, MIT হল Massachusetts Institute of Technology, যা তাবৎ বিশ্বের ইঞ্জিনিয়ার, টেকনোলজিস্টদের কাছে প্রযুক্তির লীলাভূমি।
ফোর্বসের পক্ষ থেকে MIT’র রিভিউ সেকশনের সম্পাদক David Rotman কে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
“আমরা এই তালিকা তৈরি করেছি আমাদের প্রতিটা সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করে যে তারা এবছরে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যাপারে লিখেছেন? এবং কোন কোনগুলোর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। আমরা মৌলিক উপযোগীতা বিবেচনায় এমন সব প্রযুক্তির নির্ণয় করার চেষ্টা করেছি আর প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। “
তো চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক কি সেই দশ প্রযুক্তি…
১. 3d মেটালিক প্রিন্টিং
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের কথা বোধহয় ইতোমধ্যেই কমবেশি আমরা সবাই ই জানি। কিন্তু এতদিন জিনিষটা ছিল কেবল প্লাস্টিক বা পলিমারের ছাতে ফেলা জিনিষ তৈরির প্রযুক্তি। ফলে এতে অনেক খেলনাজাতীয়, অনেক ব্যবহার্য জিনিষ তৈরি করা সম্ভব হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভব ছিলনা যেগুলোতে ধাতব বস্তুর প্রয়োজন পড়ে।
কিন্তু এ প্রযুক্তিতে ধাতব কিছু থ্রিডি পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা গেলে তা একেবারে মাঠ পর্যায়ে আমূল পরিবর্তন এনে দিবে! 3d Printer অন্যান্য দ্বিমাত্রিক বা ছাঁচে তৈরি বস্তুর চাইতে অনেক সূক্ষ্মভাবে কাজ করে বিধায় এর সাহায্যে ধাতব কিছুর খুবই জটিল গঠন তৈরি করা সম্ভব।
এপ্রসঙ্গে রটম্যান বলেন, “3d metal প্রিন্টিং প্রযুক্তি উৎপাদনকারীদের বিশাল উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে সহজেই খুব স্বল্প খরচে দুএকটা বা অল্পকিছু পার্টস তৈরি করার সুযোগ করে দিবে।”
এর ফলাফলে দেখা গেল কোনো একটা কাঙ্ক্ষিত ধাতব কিছু বানাতে গেলে আবার বিশাল ঝামেলা আর খরচ করে তার জন্যে ছাঁচের আর বড়বড় মেশিনের আয়োজন করা লাগবেনা! পাশাপাশি জিনিষও হবে জটিল।
অর্থাৎ আপনি প্রিয় মানুষকে উপহার হিসেবে একটা মেটাল পেন্ডেন্ট দেয়া জন্যে মডেল বানালেন, এরপর প্রিন্টশপে নিয়ে গিয়ে অল্প খরচে প্রিন্ট করে বের করে নিয়ে এসে ফেলতে পারবেন!
২. কৃত্রিম ভ্রূণ(Artificial Embryo)
আরেকটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি হল কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরি করা। উৎপাদন ব্যবস্থা আর চিকিৎসার ও গবেষণার ক্ষেত্রে যা হয়তো আপামর সম্ভাবনার হাতছানি! বিজ্ঞানীরা কোনোধরণের ডিম্বকোষ বা শুক্রাণু কোষের সাহায্য ছাড়াই স্রেফ Stem Cell ব্যবহার করে কাজটা করে ফেলেছেন। কাজটি অনেকক্ষেত্রে বিতর্কিত হলেও এটি এবছরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বেশ বড় কিছু ছিল! একেবারেই কোনো ডিম্বক বা স্পার্ম এর সাহায্য ছাড়া একটা কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরি যেন পিতা ছাড়া কোনো একটা প্রাণীকে কৃত্রিমভাবে জন্মদান করানোর মত ব্যাপার!
জীব প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এই বৈপ্লবিক আবিষ্কারটি হয়েছে মূলত University of Cambridge, University of Michigan আর Rockefeller University উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায়। গবেষণাটি একটি ইঁদুরের স্টেম সেল এর নমুনা নিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক ছাঁচে (Scaffold) রেখে করা হয়।
এপ্রসঙ্গে রিসার্চ টিম হেড Magdelena Zernicka-Goetz বলেন, “আমরা জানি স্টেম সেল উৎপাদনশীলতার দিক দিয়ে যাদুকরী কিছু যা এগুলো করতে পারে। আমরা বুঝতে পারিনি যে তারা এত দারুণভাবে আর সুচারুরূপে নিজেদের সুসংগঠিত করতে পারে।
প্রযুক্তিটি জীব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এবং মানুষের জন্মসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, সমস্যা প্রভৃতি জানার ক্ষেত্রে কাজে দিবে।
৩. Sensing City
এমন একটা শহরের কথা ভাবুন যার গোটা নগরব্যবস্থায় এর লোকসংখ্যা, তাপমাত্রা, হৈচৈ, কোথায় শব্দের মাত্রা কেমন, কোথায় বাতাসের শুদ্ধতা কতটুকু, কতটুকু শুদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে বা কতটুকু প্রয়োজন, সব জানান দিবে। শহরটি একই সাথে হবে আধুনিক প্রযুক্তিতে মোড়ানো আবার একই সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব!
MITর তালিকায় আরেকটা বিশালাকার প্রযুক্তির উদাহরণ হচ্ছে এই সেন্সিং সিটি। যা এর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অবস্থা জানান দিবে।
Quayside নামের নতুন এ পরিকল্পনাটি আমেরিকার Sidewalk Labs আর কানাডার টোরোন্টোর Waterfront কে ঘিরে এগিয়ে চলেছে। উক্ত প্রকল্পটির ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৭ সালে, যার কাজ শুরু হবে ২০১৯ সালের মধ্যেই।
অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি আর শৈল্পিকতার সুনিপুণ মিশ্রণে তৈরি হতে চলেছে এই সেন্সিং সিটি, যা পরিচালনার জন্যে থাকবে তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার। সবচে বড় কথা হল Sidewalk Laboratory র গবেষকরা এই সফটওয়্যারকে ওপেন সোর্স রাখার সীদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঠিক যেমনটা এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ আর ROMএর বেলায় হয়। যেন অন্য কেউ সেটাকে কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত কিছু পৃথিবীকে উপহার দিতে পারে।
সায়েন্স ফিকশন মুভির মত কিছু এক এই সেন্সিং শহরের বাস্তবায়ন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার!
৪. Cloud ভিত্তিক AI সিস্টেম
এই ক্লাউড যে সেই ক্লাউড না, মানে আসমানের মেঘ না আর AI মানে যে Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা হয়তো বলা বাহুল্য। AI এর ব্যবহার আর প্রভাব দিনকে দিন বাড়লেও তা এ্যাপলের মত একঘোরা প্রযুক্তিশিল্পে নিজেদের মাঝেই রয়েছে।
তবে এ্যামাজন, বাইদু (চাইনিজ), গুগল আর মাইক্রোসফটের মত টেক জায়ান্টরা কিন্তু এর চর্চায় থেমে নেই। তাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে কিভাবে AI এর ব্যবহার জনসাধারণের দড়গোড়ায় আরো সাবলীলভাবে পৌছে দেয়া যায়। কারণ এখনো AI সিস্টেম ব্যবহারে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যদিও AI এর অনিয়ন্ত্রিত উন্নতি সাধন মানবসভ্যতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে, কিন্তু এইসব টেক জায়ান্টেরা প্রচেষ্টায় রয়েছে কিভাবে ক্লাউড বা অনলাইন স্টোরেজভিত্তীক ব্যবস্থাকে কাজে লাগে AIকে মানুষের দৈনন্দিন কাজে আরো সহজভাবে ব্যবহার করানো যায়। পাশাপাশি যেন এরাই অন্যান্য মেশিন লার্নিং সফটওয়্যার মানে যা কম্পিউটার ফাংশনের একেবারে গোড়ায় কাজ করে এমন কিছু তৈরি করতে পারে! সেক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থানে ঝুঁকি পড়বে নিশ্চয়ই, তবে জীবনযাত্রা অনেকখানি সহজ হয়ে যাবে।
ক্লাউডভিত্তীক AI ব্যবস্থার জন্যে সম্প্রতি Amazon তাদের AWS, গুগল তাদের TensorFlow নামের ওপেন সোর্স AI লাইব্রেরী আর মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব Cloud AI সিস্টেম Azure নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। গুগল এরই মাঝে Could AutoML নামের একটি বিশেষ প্রোগ্রাম ছেড়েছে যা AI এর ব্যবহারকে আরো সহজতর করে তুলবে।
অপরদিকে বৃহত্তম টেক জায়ান্ট গুগলকে টেক্কা দিতে মাইক্রোসফট এ্যামাজোনের সাথে মিলে গ্লুওন (Gluon) নামের ডিপ লার্নিং লাইব্রেরী গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছে।
দেখা যাক, কে কতখানি এগিয়ে থাকে!
৫. Duelling Neural Network
কখনো চিন্তা করেছেন, আপনার পিসি বা কোনো অনলাইন ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত কোনো AI সফটওয়্যার নিজে নিজে চিন্তা করতে পারছে কোনোকিছুর ব্যাপারে?! অথবা কোনো শব্দ নিজে নিজেই বানিয়ে ফেলা, ঠিক যেমন আমরা গান গাই!
AI বহু ছবির মাঝে থেকে বা ক্যামেরা ব্যবহার করে বহু ব্যক্তি, বস্তুর মধ্যে থেকে নির্দিশজট ব্যক্তি বা বস্তুকে বা বহু শব্দ থেকে একদম পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নির্দিষ্ট শব্দটিই শনাক্ত করতে পারে ঠিকই, কিন্তু নিজে থেকে চিন্তা করার যে ব্যাপারটা রয়েছে AI তা পারেনা। আর এক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে টেক জায়ান্ট গুগল, AI কোম্পানি DeemMind আর আমাদের অনেকের অতি পরিচিত গ্রাফিক্স কার্ড প্রযুক্তির ধারক Nvidia!
বুদ্ধিটা সর্বপ্রথম University of Montreal এর PhD ছাত্র Ian Goodfellow এর মাথায় আসে। Generative Adversarial Network (GAN) নামেরএকটা নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় দুটি নিউরাল নেটওয়ার্ক নেটওয়ার্ক কে কাজে বসানো হয়, যার একটি হল Generator যা একেবারে সত্যিকারের মত একটা তিনহাতওয়ালা মানুষের ছবি নিজে নিজেই তৈরি করে দেখায়, যা দেখে অপর নেটওয়ার্ক Discriminator কে নির্ণয় করতে হবে এটা আসল না নকল। কিন্তু দেখা গেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পার্থক্যকারী নেটওয়ার্ক তা ধরতে পারেনি!
এ ব্যবস্থাটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এটি অনেক সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করা যাবে। অনেক অনুসন্ধান আর গবেষণামূলক কাজেও ব্যবহার করা যাবে।
৬. Babel Fish Earbuds বা ইয়ারফোন
কেউ আপনাকে বললো “Bon gironi misere”, আর সেটা আপনার কানে থাকা বিশেষ এয়ারফোন অনুবাদ করে বললো, “Good day mister!”
কি? দারুণ না!
এ যেন সায়েন্স ফিকশন থেকে উঠে আসা কিছু!
ব্যাবেল এয়ারপ্লাগ আসলে এমনি এক অনুবাদক যন্ত্র৷ যা আপনাকে অন্যান্য যেকোনো ভাষায় অপরপক্ষের বলা কোনোকিছুকে অনুবাদ করে শোনাবে আর তাকেও অনুবাদ করে দিবে। গুগলের বাজারে আনা এই প্রযুক্তিটির দাম ১৫৯ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় চৌদ্দ হাজার টাকার মত পড়ে! এটি গুগল পিক্সেল সিরিজের ফোনের সাথে মিলে কাজ করে। তবে আগামীতে এর ফিচার আরো সমৃদ্ধ হবে হয়তো।
এর ডিফল্ট ল্যাংগুয়েজ সেট করা ইংলিশ যা অন্য যেকোনো ভাষাকে এই ভাষায় প্রায় প্রায় সাথে সাথে বা Realtime এ রূপান্তর করে দিবে। অপরদিকে কেউ ফোনটির নির্দিষ্ট এ্যাপ এর বাটন ধরে থাকলে অপর প্রান্তের কথা ট্রান্সলেট হয়ে তাতে বলে উঠবে।
এমন চলতি ফিরতি ট্রান্সলেটর ইতিহাসে এই প্রথম, যা আমাদের কল্পনাকে বাস্তবে নিয়ে এসেছে।
৭. কার্বনহীন বা জিরো কার্বন প্রাকৃতিক গ্যাস
গ্যাস, আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদানের নাম। যানবাহন, ফ্যাক্টরি আর যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বসতবাড়িতে প্রতিদিনের অপরিহার্য্য কাজে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু এই প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষুদ্র পরিসরে হোক বা শিল্পক্ষেত্রে, ব্যবহার শেষে প্রচুর কার্বন ছাড়ে যা বায়ুমণ্ডলে মিশে ক্রমেই গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েই চলেছে।
আমেরিকার মোট বিদ্যুতের ৩২% আর সারাবিশ্বের মোট বিদ্যুতের ২২%ই উৎপন্ন করা হয় এই গ্যাস ব্যবহার করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পরিবেশের জন্যে তা কি পরিমাণ হুমকিস্বরুপ!
এই বিপাক থেকে উত্তরণের জন্যে 8 Rivers Capital, Exelon Generation আর CB&I এর উদ্যোগে বর্তমানে আমেরিকার Houston এ পাশেই একটি পাইলট বা পরীক্ষামূলক প্লান্ট এ এই কার্বনযুক্ত গ্যাস এর পরীক্ষা চলছে। যা এপর্যন্ত সফলভাবেই এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যে সময় ধরা হয়েছে ৩-৫ বছর।
এটি ব্যাপক আকারে প্রসারলাভ করলে তা কেবল ২০১৮ সালের নয়, গত দুইশ বছরের হিসেবে যুগান্তকারী এক প্রযুক্তিময় পরিবর্তন হবে!
৮. লেনদেনে পার্ফেক্ট অনলাইন প্রাইভেসি
লেনদেনের বেলায় অনলাইন প্রাইভেসি ব্যাপারটা বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। কে কার কাছে টাকা পাঠাচ্ছে, কত পাঠাচ্ছে, গ্রাহক আর গ্রহীতার তথ্য কি কি এ ব্যাপারে আসলে অনলাইনে প্রাইভেসি রক্ষা করা সম্ভব হয়না। লিকেজ ফ্রি প্রাইভেসি বলতে যেটা বুঝায়, সেটা আর হয়ে ওঠেনা। এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সির ইথেরাম সিস্টেমের মত ব্যাপারও লিকেজ ফ্রি প্রাইভেসি দিতে অক্ষম! ফলে একাউন্ট, তথ্য আর ট্রানজেকশন বা লেনদেন হ্যাক হবার ঝুঁকিটা থেকেই যায়।
আইটি এক্সপার্ট আর ICT খাতে থাকা বিজ্ঞানীদের কাছে এমন লিকেজ ফ্রি ব্যবস্থা যেন তাই কল্পনার মতই।
কিন্তু সম্প্রতি ব্লকচেইনভিত্তিক প্রাইভেসি সিস্টেম Zcash নিয়ে এলো এক ভিন্ন প্রযুক্তি, যা কয়েক দশকের ধারণায় এনে দিচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন! জিক্যাশ তাদের নিজস্ব ব্লকচেইন সিকিউরিটি ব্যবস্থা zk-SNARK (Zero-Knowledge Succinct Non-interactive Argument of Knowledge) এর মাধ্যমে এই সুবিধা দিচ্ছে।
এতে করে যেকোনো অনলাইন ভিত্তিক লেনদেনে গ্রাহকের তথ্য থাকবে একেবারেই আড়ালে, মানে পুরোটাই নিরাপদে।
এ ব্যবস্থা অতিদ্রুত সম্প্রসারিত হলে ব্যাংকগুলোও যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে তাদের ক্লায়েন্টদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পেরে। গ্রাহকেরাও নিশ্চিন্তে থাকবে একেবারে পুরোপুরি ঢেকে থাকা এক ব্যবস্থায় লেনদেন করতে পেরে।
৯. DNA ভিত্তিক ভবিষ্যৎবক্তা!
আরে না না, ভাববেন না, যে এরা আবার সিনেমা-নাটকের মত মানুষের ভবিষ্যতে কি কি ভবিষ্যৎবাণী করবে। তবে এই প্রযুক্তি জন্মের সময় শিশুর আগাম শারীরিক ও মানসিক বহু সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দিতে পারবে!
জন্মটাকে মনে করুন এক পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় কেউ উত্তীর্ণ হয়ে পৃথিবীতে আসলে পরে তার বাবা মা’কে তার এমন এক রিপোর্ট কার্ড দেয়া হল যাতে তার ছেলের বর্তমান ও পরবর্তী সময়ের সম্ভাব্য রোগ ব্যাধিসমূহ, বুদ্ধিমত্তা বা কোন দিকে কেমন প্রতিভা বা মস্তিষ্কের ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকবে সেসব সম্পর্কে অনেক কিছু বাতলে দিবে! মানে বলা যায় এ যেন শরীরের ভবিষ্যৎ বক্তা!
বিজ্ঞানীরা এই জিন টেস্টিং প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন polygenic risk scores বা polygenic scores । শিশুর বিভিন্ন ধরণের জেনেটিক পরীক্ষণের মাধ্যমে স্কোর অনুযায়ী বিভিন্ন রোগবালাই আর বিভিন্নক্ষেত্রে মেধা আর মেধাহীনতার সম্ভাবনা জানাতে পারে এটি। ফলে অনেক রোগবালাইয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে যেমন আগে থেকেই অবগত হওয়া যাবে, তেমনি শিশুর মেধা অনুযায়ী তাকে সঠিকভাবে আর সঠিকক্ষেত্রেই পরিচালিত করা যাবে।
তবে এটি যেহেতু মেধার ব্যাপারগুলো ধরতে পারে সেহেতু এর দ্বারা বৈষম্যের ঝুঁকিও রয়েছে। ফলে এটি এখনো একটি বিতর্কিত প্রযুক্তি হিসেবেই রয়েছে অনেকের দৃষ্টিতে।
১০. কোয়ান্টাম কম্পিউটার দ্বারা আণবিক ডিজাইন
কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিখ্যাত অকল্পনীয়-রকমের বেশি মাল্টিটাস্কিং ক্ষমতার জন্যে। আর এর এই ক্ষমতা এতটাই বেশি, যে তার পুরো উপযোগীও আমরা এখন পর্যন্ত জানিনা ঠিক করে।
অপরদিকে ক্যামিক্যাল সায়েন্সে আর বিভিন্নধরণের প্রযুক্তি বিশেষকরে সৌরশক্তি জাতীয় বিষয়ের প্রযুক্তিতে উন্নতির জন্যে মলিউকুলার মডেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। প্রতিটা বস্তু যেহেতু মলিকিউল বা অণু দ্বারাই গঠিত, তাই একে ম্যাটেরিয়াল মডেলিংও বলে৷ আণবিকভাবে নিত্যনতুন মডেল তৈরি মানে হচ্ছে গোড়া থেকে নতুন একটা কিছু বানাতে পারা বা আবিষ্কার করতে পারা। কিন্তু ব্যাপারটি আণবিক হওয়াতে এটি যেমন সূক্ষ্ম, তেমনি অত্যন্ত কঠিন।
কারণ এতে সিস্টেম অত্যন্ত ক্ষমতাধর হওয়া চাই। কিন্তু এই সমস্যা অনায়াসেই সমাধানের পথ দেখিয়ে দিয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং 0 ও 1 এর পাশাপাশি একই সাথে 0 ও 1 এর ধারক এক সুপারপজিশন পদ্ধতিতে কাজ করে, এ বিটকে Quanta bit বা Qbit বলে। ফলে কাজ করার প্রক্রিয়ায় চলে আসে আমূল পরিবর্তন। আর এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই আগামীতে আণবিক মডেল নির্মাণ আরো সহজতর হতে চলেছে।
তো এই ছিল আমাদের আজকের আয়োজন ২০১৮ সালের অনন্য ১০ প্রযুক্তি নিয়ে। আবারো আসবো ফিরে হয়তো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে।
ততক্ষণ সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন,
আর বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ technologyreview forbes
One Comment
MIT’র তালিকায় ২০১৮ এর ১০ প্রযুক্তি! – আমাদের পানিশ্বর
[…] post MIT’র তালিকায় ২০১৮ এর ১০ প্রযুক্তি! appeared first on […]