গত বছর নাসার বিজ্ঞানীরা ৪০ আলোকবর্ষ দূরে শীতল লোহিত বামন নক্ষত্রকেন্দ্রিক সোলার-সিস্টেম খুঁজে পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সম্প্রতি ‘নেচার’ সাময়িকীতে এই গবেষণা-বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
NASA এবং ESA এর বিজ্ঞানীদের যৌথ দল যার ঘোষণা দেন। নাসার সর্বাধুনিক টেলিস্কোপ (Spitzer Space Telescope) এবং কয়েকটি ভূমিকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন সৌরজগতটির সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রহগুলি আমাদের খুব নিকটে অবস্থিত। মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দুরে , যা মহাকাশের হিসেবনিকেশে খুব নগণ্য দূরত্ব ।
অত্যন্ত শীতল ওই নক্ষত্রের নাম ট্রাপিস্ট-১ । ট্রাপিস্ট-১ এর মত লোহিত বামন তারকা মহাকাশে বেশ সচরাচর দেখা যায়। এই সাত গ্রহের সন্ধান সৌরজগতের বাইরে প্রাণের চিহ্ন অনুসন্ধানের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সম্ভাবনাময় আবিষ্কার। গ্রহগুলোর আকার ও ভর পৃথিবীর সদৃশ আর প্রায় নিশ্চিতভাবেই পাথুরে। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে প্রাণের বিকাশে সহায়তাকারী মহাসাগর থাকার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা বলছেন,
একটি নক্ষত্র হতে গেলে যে বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় , এর খুব সামান্যই আছে ওই নক্ষত্রের মধ্যে। নক্ষত্রটির তাপমাত্রা সূর্যের অর্ধেক আর ভরের দিক থেকেও সূর্যের ১০ ভাগের ১ ভাগ। এর রং লাল। এটি বৃহস্পতি গ্রহের প্রায় সমান। পৃথিবী থেকে খালি চোখে কিংবা সাধারণ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে দেখা প্রায় অসম্ভব।
এমআইটি ও জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ ট্রাপিস্ট-১ সিস্টেমের গ্রহগুলিতে এমন বর্ণালী লক্ষ করেছেন । বর্ণালীর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরীক্ষা করে হাইড্রোজেনের উপস্থিতির প্রমান পাওয়া গিয়েছে। ট্রাপিস্ট-১ সিস্টেমের অন্তঃস্থ দুই গ্রহ ট্রাপিস্ট-১-বি এবং ট্রাপিস্ট-১-সি এদের সূর্যের নিকটে অবস্থিতি বলে এই গ্রহে বিকিরণে আর বেশী।
তাই বিজ্ঞানীরা এই নতুন আবিষ্কৃত সৌরজগত নিয়ে বেশ কৌতুহলি । কেননা এই নতুন জগত পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানে বেশ উপযুক্ত পরিবেশ।আর এই ধরনের আরও তারকা ও তারকাকেন্দ্রিক জগতের রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে । নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহগুলি নিয়ে এত আগ্রহের কারণ গ্রহগুলি মোটামুটি পৃথিবীর সমান। যে কারণে অভিকর্ষ বল পৃথিবীর মত বা আশেপাশে । আর এইধরনের মধ্যম বা ছোট মাপের গ্রহগুলি পাথুরে হয়ে থাকে(যা পৃথিবীতে বর্তমান জীবের মত প্রাণের জন্য আবশ্যক ) । আর তরল পানি থাকার জন্য তো পাথুরে গ্রহের বিকল্প নেই । কারণ বড় গ্রহ (আমাদের সৌরজগতের বৃহস্পতি,শনি গ্রহ ) গ্যাসীয় হয়ে থাকে। যা পৃথিবীতে বর্তমান জীবের জন্য মোটেও আদর্শ নয়।
গবেষকেরা বলছেন, নক্ষত্রটিকে ঘিরে যে গ্রহগুলো আছে, তা যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা গ্রহণ করে, তা সূর্য থেকে পৃথিবী যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা গ্রহণ করে তার চার গুণ। অর্থাৎ, এসব গ্রহ ‘হ্যাবিটেবল জোন’ এর মধ্যে পড়ে।
আর এই হ্যাবিটেবল জোন হচ্ছে , কোনো গ্রহ যদি কোন নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে তাহলে নক্ষত্রটি থেকে গ্রহটির দূরত্ব, তাপমাত্রা বা প্রাণের উদ্ভব ঘটার সম্ভাব্য অঞ্চল । গবেষকদের মতে পৃথিবীর সদৃশ তিনটি গ্রহের মধ্যে দুটি গ্রহ নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকায় এগুলোতে পৃথিবীর মতোই দিন ও রাতের প্রক্রিয়া চলে।
প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আমোরি ত্রিয়ো বলেন, ‘সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ এগিয়েছি। এত দিন পর্যন্ত না পেলেও আমরা এবার সঠিক গ্রহটি পেয়েছি।’
আগামী বছর অতীব বিবর্ধনক্ষমতা সম্পন্ন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হলে এই গ্রহগুলি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে ।
তথ্যসূত্র ঃ সিএনএন