সুনামি, জাপানিজ এই শব্দটির বাংলা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে “বন্দরের ঢেউ”। এখানে বন্দরের ঢেউ বলতে উপকূলীয় এলাকা সমূহকে বোঝানো হয়ে থাকে যেগুলো সমুদ্রের গা ঘেষে থাকে।
সুনামি হচ্ছে মহাসমুদ্রে তৈরি হওয়া একের পর এক বিশাল জল তরঙ্গ যার সৃষ্টি মহাসমুদ্রের তলদেশে তৈরি হওয়া কোনো ভূমিকম্প অথবা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে। অর্থাৎ, সমুদ্রের নিচে তৈরি হওয়া কোনো ভূমিকম্পের ফলে যে বিশাল ঢেউ চারদিকে ছড়িয়ে যায় এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আঘাত হানে সেই ধরণের ঢেউকে আমরা সুনামি বলতে পারি।
সুনামি এবং সাধারণ ঢেউ
সুনামির ঢেউ এবং সাধারণ ঢেউয়ের মাঝে প্রচুর তফাৎ রয়েছে। সমুদ্রে তৈরি হওয়া সকল ঢেউই সমুদ্রের বায়ু প্রবাহ এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য হয়ে থাকে। তাছাড়া জোয়ার ভাটার ক্ষেত্রে চাঁদ এবং সূর্যের ভূমিকা বেশি।

এক একটি সুনামি ঢেউয়ের উচ্চতা ১০০ ফিট পর্যন্ত হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে সূর্য এবং চন্দ্রের আকর্ষন এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন, এতো বড় ঢেউ সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। যদি সৃষ্টি হতেই হয় তবে তার শক্তি অনেক বেশি হতে হবে এবং সমুদ্রের পানির চাপ অপসারণ করার মতো ক্ষমতা থাকা লাগবে। ২০০৪ সালের ইন্দোনেশিয়ায় ঘটে যাওয়া সুনামিটির কথা শরণ করলেই হয়।

সুনামি তৈরি হওয়ার লক্ষণগুলো কি?
একটি সুনামির ঢেউ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট উপাদান থাকা প্রয়োজন। সেই সকল উপাদানগুলো উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের লক্ষণগুলো একই সাথে একই সময় দেখা যাবে।
সেগুলো হচ্ছে;
- সমুদ্রের তলদেশে দুইটি মহাদেশীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে শক্তিশালী কম্পনের সৃষ্টি হবে
- সেই কম্পন পানির একটি বিশাল অংশকে ধাক্কা দিবে এবং নিজের অবস্থান হতে সরতে বাধ্য করবে
- মহাসমুদ্র বা সমুদ্রের উপরিভাগে বিশালাকারের ঢেউয়ের সৃষ্টি হবে
- সমুদ্রের গভীরতা কমপক্ষে ১০০০ মিটার হতেই হবে (কারণ স্বল্প পানি নিয়ে বিশালাকারের ঢেউ তৈরি করা সম্ভব নয়)। যত গভীর সমুদ্র, তত বড় ঢেউ
- উপকূলের পানি সমুদ্রের দিকে সরে আসবে অর্থাৎ উপকূলে পানি শুকিয়ে যাবে (কারণ যখন বিশাকার ঢেউ উপকূলের স্বল্প গভীরতায় পৌছায় তখন ঢেউয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রচুর পানির প্রয়োজন পড়ে)
- পানির উচ্চতা ৩০ ফিট বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে
সুনামির ঢেউ এতো বড় হয়ে আছড়ে পড়ে কেন?
সুনামিকে অনেক সময় জোয়ারের ঢেউয়ের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। কেন? কারণ যখন জোয়ারের ঢেউগুলো উপকূলের কাছাকাছি আসতে থাকে তখন গভীরতা কমার সাথে সাথে জোয়ারের পানি একটু উচু হয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে। সুনামির ক্ষেত্রেও অনেকটা এমনিই ঘটে থাকে।

সুনামি তৈরি হওয়ার মধ্যবিন্দু অর্থাৎ উৎস থেকে যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন সে তার সঙ্গে পুরো পানির একটি স্তর নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। সাধারণত কোনো ঢেঊ সামনে এগুনোর সময় তার শক্তি সামনে এগিয়ে যায়, পানির অণু সেখানেই থাকে। কিন্তু সুনামির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।
আমরা সকলেই জানি উপকূলের কাছাকাছি পানির গভীরতা কম থাকে। যখন কোনো সুনামির ঢেউ উপকূলের কাছাকাছি আসে তখন তার ঢেউয়ের গতি পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর জন্য সুনামির তরঙ্গদৈর্ঘ হ্রাস পায়। ফলে ঐ তরঙ্গের উচ্চতা বেড়ে যায়। যদিও গতি কমে যায়।
সুনামির সময় তৈরি হওয়া ঢেউগুলির শক্তি অনেক বেশি থাকে। উৎস থেকে ছুটে আসা এক একটি ঢেউয়ের গতিবেগ প্রায় ৯৫০ কিমি প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে। এটি একটি জেট বিমানের গতির সমতুল্য।
সুনামি যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, সেখানে থেকে তার উচ্চতা বেড়ে যায় (এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০০ ফিট)। গতি কমে গেলেও যে শক্তি পূর্বে অর্জন করেছিল সেই শক্তি দিয়েই উপকূলে আঘাত হানে।
ঢেউয়ের গতির উপর নির্ভর করেই তা উপকূল ছাড়িয়ে আরো ভিতরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে (জাপান, ২০১১)। পানির গতিবেগ এতো বেশি থাকে যে সামনে যাই থাকুক না কেন, স্রোতের সাথে পেরে উঠতে পারা কষ্টসাধ্য। জাপানে ২০১১ সালে যে সুনামি হয়েছিলো, বিভিন্ন ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে দেখা গিয়েছিলো সেই স্রোতের ভয়াবহতা। (তথ্যসূত্রঃ Explaining the physics of tsunamis to undergraduate and non-physics students- Margaritondo, G (2005))
কিভাবে জানা যাবে সুনামি আসছে কিনা?
বর্তমানে মানুষের নিকট যত প্রযুক্তি রয়েছে তা পূর্বে ছিলো না। তাহলে পূর্বে মানুষ কিভাবে বুঝতে পারতো যে সুনামি আঘাত হানতে যাচ্ছে?
পূর্বে মানুষজন ছিল প্রকৃতি নির্ভর। তারা প্রকৃতির সাথে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলো যে, প্রকৃতিতে যদি কোনোরূপ পরিবর্তন দেখা দিতো তখন তারা সেটিকে বিপদের একটি চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করতো।
সুনামি পূর্ববর্তী প্রাকৃতিক কিছু নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপকূলে সমুদ্রের পানি হঠাৎ করেই শুকিয়ে যেত। অর্থাৎ, সমুদ্রের যে জোয়ার ভাটার সাধারণ নিইয়ম রয়েছে তা ভঙ্গ করে পানি সমুদ্রের দিকে সরে যেত।
পরবর্তীতে প্রায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমুদ্রের বিশালাকার ঢেউ আছড়ে পড়তো সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। এভাবে এই নিদর্শনটিকে মানুষ হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে।
আবার কোনো এলাকায় ভূমিকম্প সংঘঠিত হওয়ার পূর্বে ঐ এলাকার পশু-পাখির মাঝে বিচিত্র ক্রিয়াকলাপ দেখা দেয়। তাদের স্বাভাবিক আচরণের বাইরে অন্য এক প্রকৃতিকে দেখা যায়। যা এক সময় ভূমিকম্পের চিহ্ন স্বরূপ ব্যবহৃত ছিল।
বিজ্ঞানীদের মাঝে এই রহস্যগুলো এখনো অজানা অথবা বলা যায়, বৈজ্ঞানিকভাবে এই সকল রহস্যগুলোকে উদঘাটন করা অনেক জটিল একটি ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এর পিছনে অনেক যুক্তিই দাঁড় করানো হয়েছিলো যার মধ্যে একটি ছিল মানুষের সাথে অন্যান্য প্রানীদের স্রবণ ক্ষমতা।
এখন পর্যন্ত যতগুলো সুনামি হয়েছে (একুশ শতকে), বেশির ভাগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছিলো সুনামি বোয় (buoy)। এই সুনামি বোয়গুলোতে যখন কোনো ঢেউ আঘাত করে তখন সেই ঐ ঢেউয়ের সকল তথ্য সংগ্রহ করে ভূমিতে অবস্থিত তথ্যকেন্দ্রে প্রেরণ করে।

সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন চার্ট তৈরি করা হয়ে থাকে। যখন বড় কোনো ঢেউ আঘাত করবে তখনও এই সুনামি বোয়গুলো তাদের তথ্য পাঠিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া দুষ্কর।
একটি সুনামির ঢেউ যদি ৬০০-৮০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় এগিয়ে আসতে থাকে, সেক্ষেত্রে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েও পারতে হবে। নাহয় প্রতি বছর প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
এখন বিজ্ঞানীদের আরেকটি প্রচেষ্টা হচ্ছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সুনামিকে অবলোকন করা। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও কিছু ত্রুটি রয়েছে।
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হয়ত সুনামির ঢেউ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া সম্ভব। কিন্তু যে কারণে সুনামি তৈরি হচ্ছে, সমুদ্র তলদেশের ভূমিকম্প, সেটির পূর্ববর্তী ধারণা লাভ করা প্রায় অসম্ভব। স্যাটেলাইট দিয়েতো নয়ই।
মানব ইতিহাসের ভয়ংকর সুনামিগুলো
ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে প্রতিবার যখন কোনো সুনামি আঘাত হেনেছে তখন ঐ অঞ্চল ভয়ংকর এক নরকে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে মহাসমুদ্রের আবির্ভাবের পর থেকেই এমন ঘটনাগুলো ঘটছে।
আমরা এই অংশে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর কিছু সুনামিগুলোর তথ্য উপস্থাপন করবো যাতে সকলেই এই সম্পর্কে বাস্তবিক একটি ধারণা পেতে পারেন।
১। সুমাত্রা – ইন্দোনেশিয়া, ২৪ ডিসেম্বর ২০০৪
মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি সম্পন্ন সুনামি ছিল। এমনকি পৃথিবীতে যতগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়ে ছিল তার একটি ঘটেছিল এই দিনে।

২৪ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের সকাল বেলা। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডে পর্যটকে ভরপুর। তখন উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে শীতকাল। তাই গ্রীষ্মের ছুটিতে সকলে এই দেশগুলোতে ঘুরতে যান।

কিন্তু সকাল ৭.৫৯ মিনিটে হঠাৎ পুরো অঞ্চলগুলো ৯.১ রিক্টারস্কেলে কেপে উঠলো। সুমাত্রার সমুদ্র তলদেশে দুইমহাদেশীয় প্লেটের নিজেদের জায়গা পরিবর্তনের ফলে এই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পটির উৎস ছিলো সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিমি গভীরে। উত্তর-পূর্ব ভারত মহাসাগরের এই ফাটলটি প্রায় ১৩০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ভূমিকম্প থেকে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের উচ্চতা খোলা সমুদ্র থেকে উপকূলে যাওয়ার সময় ৫০-৮০ ফিট ছিল, যা সুমাত্রার মিউবোলাহ ‘র কাছে এসে বিশালাকার এক পানির দেয়ালে রূপান্তরিত হয়।
সংঘঠিত এই সুনামির প্রভাব আন্টার্ক্টিকায়ও পাওয়া গিয়েছিল। এর গতিবেগ ছিল প্রায় ৫০০+ মাইল প্রতি ঘন্টা। এতো দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা ১০০ ফিটের পানির দেয়ালের নিকট সকলেই অসহায় ছিল।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রায় ২,৩০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
(তথ্যসূত্রঃ Deadliest tsunami of Japan- History.com)
২। উত্তর-পূর্ব জাপান, ১১ মার্চ ২০১১
১১ মার্চ ২০১১, শান্ত এক দুপুরবেলায় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে হঠাৎ ৯ রিক্টারস্কেলের একটি ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়। ভূমিকম্প হওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর জাপানের সুকুইসো অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে প্রায় ৮০০ কিমি প্রতি ঘন্টার বেগে।

ভুমিকম্পটি সংঘঠিত হয়েছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪.৪ কিমি গভীরতায়। ঢেউগুলো যখন জাপানের উপকূলের কাছাকাছি চলে আসে তখন তার উচ্চতা ১০ মিটারে পৌছায়।
ভুমিকম্প হওয়ার পর পরই জাপান সরকার প্রায় ৪৫২,০০০ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণ করে। কিন্তু তারপরও ১৮,০০০ থেকেও বেশি মানুষের প্রাণহানী ঘটে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, জাপানের প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়, যা পুষিয়ে উঠতে প্রায় ৫ বছরের মতো সময় লেগেছিলো জাপানের। এখনো প্রায় ১৫০,০০০ মানুষ তাদের ঘর ছাড়া হয়ে জীবনযাপন করছেন।
৩। লিসবন, পর্তুগাল, ১ নভেম্বর ১৭৫৫
১৭৫৫ সালে পর্তুগালের পশ্চিম অংশে এবং স্পেনের দক্ষিণ অংশে ৮.৫ রিক্টারস্কেলের ভুমিকম্প অনুভূত হয়। সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট সুনামি উপকূলে এসে প্রায় ৩০ মিটারের একটি পানির দেয়াল তৈরি করে ফেলে।

এর ফলে মূহুর্তেই প্রায় ৬২,০০০ মানুষ মারা যায় সেই সুনামিতে। এই সুনামির প্রভাব এতোটাই বেশি ছিল যে বার্বাডোসেও ১.৫ মিটার উচ্চতার ঢেউ পৌছায়।

৪। ক্রাকাতুও, ইন্দোনেশিয়া, ২৭ আগষ্ট ১৮৮৩
এই সুনামিটি ঘটেছিলো মূলত সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরিভাগের ভূমির আন্দোলনের জন্য। ক্রাকাতুও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের দরুণ এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

তবে পরবর্তীতে এটি আরো স্পষ্ট হয় যে, ক্রাকাতুও আগ্নেয়গিরির ঠিক নিচে অবস্থিত মেন্টাল প্লুমের জন্য (মেন্টাল প্লুম হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রার একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পাথর গলিত ম্যাগমায় পরিণত হয়) অগ্নুৎপাত ঘটে। এর ফলে দুই মহাদেশিয় প্লেটের মাঝে যে আলোড়ন হয়েছিল সেখান থেকেই কম্পনগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং সমুদ্রে উচু ঢেউয়ের সৃষ্ট করেছিলো।

প্রায় ৩৭ মিটার উচু ঢেউগুলি একের পর এক উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে। যার ফলে প্রায় ৪০,০০০ ও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এমনকি ভারত মহাসাগরে মৃত লাশগুলোকে মাসের পর মাস পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে। মেরাক শহর, যা কিনা ৪৬ মিটার উচ্চতায় ছিল, সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়। (তথ্যসূত্রঃ Krakatau: The Destruction and Reassembly of an Island Ecosystem- Thornton, Ian W. B. (1997))
(তথ্যসূত্রঃ Deadliest Tsunamis-Australian geography.com)
কোন কোন দেশগুলো সুনামির প্রভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত?
প্রথমদিকেই উল্লেখ করা হয়েছিলো যে সমুদ্রের গভীরতা যত বেশি সেখানে ঢেউয়ের উচ্চতাও তত বেশি হবে। তাহলে যদি কোনো কারণে সমুদ্রের গভীরতা কমে আসে এবং উপকূল থেকে দূরত্ব বেশি হয় তবে আশা করা যেতে পারে যে ঐ অঞ্চল আশংকা মুক্ত।
কিভাবে? কোনো অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা কম হওয়া তখনি সম্ভব যখন তার উপকূলের সঙ্গে ‘কন্টিনেন্টাল শেলফ’ যুক্ত থাকবে। কন্টিনেন্টাল শেলফগুলো বেশির ভাগই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
আমরা জানি, যখন সুনামির ঢেউগুলো উপকূলের কাছাকাছি চলে আসে তখন স্বল্প গভীরতায় ঢেউয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
কিন্তু কন্টিনেন্টাল শেলফ যদি অনেক বিশাল হয় (বাংলাদেশে ২০০ কিমি বিস্তীর্ণ) তবে ঢেউগুলো উপকূলে পৌছানোর পূর্বেই ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেঙে যাবে। ফলে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের এমন কন্টিনেন্টাল শেলফ আছে এবং প্রতি নিয়ত বিভিন্ন সুনামি থেকে ঐ দেশের উপকূলকে আগলে রাখছে। শুধু যে সুনামি আটকে দিচ্ছে তাও না, সাথে বিভিন্ন সম্পদের প্রাচুর্য এই কন্টিনেন্টাল শেলফ।
আল্লাহ্ হাফেজ