প্লাস্টিক থেকে উচ্চমানের তরল পণ্য উৎপাদন

ক্যাটালিক পদ্ধতি ব্যবহার করে একক ব্যাবহার করা বা ওয়ান টাইম প্লাস্টিককে উচ্চমানের তরল পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। আমাদের ধারণার চাইতেও বেশি গুণাগুণ রয়েছে সব একক ব্যবহার করা প্লাস্টিকের।

রিসার্চাররা সম্প্রতি ফেলে দেওয়া , কম দামী প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার করে উচ্চমান সম্পন্ন তরল পণ্য তৈরির প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন। এসব উচ্চ গুণ সম্পন্ন তরলের ভিতর রয়েছে মটরে ব্যবহার উপযোগী তেল, লুব্রিকেন্ট, ডিটারজেন্ট এমনকি প্রসাধনী পণ্যও। এই আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে প্রচলিত কমদামী, নিম্নমানে প্লাস্টিকের রি-সাইকেল প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে।

এই ক্যাটালিক পদ্ধতি , পরিবেশ থেকে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে তড়িৎ সাফল্য পাবে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।

নর্দওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, অ্যারগোনে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং এমস ল্যাবরেটরির নেতৃত্বে এই গবেষণা দলটি কাজ করেছে।

“ সামাজিকভাবে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে আমরা বেশ কিছু কাজ করতে পারি। কিন্তু কিছু জায়গায় সবসময়ই সমস্যা দেখা দেবে, যেখানে প্লাস্টিকের বদলে অন্যকিছু ব্যবহার মুশকিল। তাই আমরা চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছি, এসব একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে কী করা যায়।”

– অ্যারন ডি. শাডো।

“ আমাদের দলটি প্লাস্টিক দূষণের পাহাড়-সম সমস্যার একটা সমাধান বের করতে পেরে আনন্দিত।” বলছিলেন নর্থ-ওয়েস্টার্নের কেনেথ আর. পোয়েপ্পেলমাইয়ার। “ আমাদের গবেষণায় ভবিষ্যতে যাতে আমরা প্লাস্টিক ব্যাবহার করেও, পরিবেশের কম ক্ষতিসাধন করতে পারি এবং মানব স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারি সেটার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।”

পোয়েপ্পেলমাইয়ার এমস ল্যাবরেটরির কেমিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল সাইন্সের সাইন্টিস্ট ডিভিশনের অ্যারন ডি শাডো, অ্যারগনে ন্যাশনাল ল্যাবরেটির ক্যাটালিস্ট প্রোগ্রামটির গ্রুপ লিডার ম্যাসসিমিলিয়ানো ডেলফেরোর সাথে যৌথ নেতৃত্ব দিয়েছেন।

গবেষণাটি ২৩ অক্টোবর,২০১৯ সালে ACS Central Science জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

প্লাস্টিকজনিত সমস্যা

প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হয়। বিশ্লেষকরা গবেষণা করে বের করেছেন যে ২০৫০ সালের ভেতর প্লাস্টিক উৎপাদন প্রায় চারগুন বাড়বে। প্রায় ৭৫% প্লাস্টিক পণ্যই একবারের বেশি ব্যবহৃত হয় না। এসব প্লাস্টিকের সিংহভাগই আমাদের সাগর, আর জলাশয়ে জমা হয়ে প্রাণীকূল ধ্বংস করছে আর পরিবেশকে করছে বিষাক্ত।

প্লাস্টিক গলিয়ে কিংবা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করলে যে ধরণের প্লাস্টিক পাওয়া যায় তা নিম্নমানের এবং গঠন আসল প্লাস্টিকের মতন শক্তিশালী নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ডাউন-সাইকেল প্লাস্টিকের বোতল গলিয়ে তৈরি করা পার্ক বেঞ্চ।

শক্তিশালি কার্বন-কার্বন বন্ধনের কারণে প্লাস্টিকগুলো পচনশীল না। ফলে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকগুলো আরও ছোট ছোট প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়। যেগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। যখন সবাই এই শক্তিশালী কার্বন বন্ধনকে সমস্যা হিসেবে দেখছে, তখন দলটি এই বন্ধনকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।

ডেলফ্রেডো বলেন, “ আমরা চেয়েছি এই বন্ধনকে ধরে রাখা উচ্চ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রভাবক হিসেবে পলিইথিলিন অণুতে পরিণত করা যাতে এগুলো ব্যবসায়িক পণ্যে মূল্য সংযোজন করে। ”

একটি ক্যাটালেটিক সমাধা

এই গবেষণায় যে ক্যাটালিস্ট বা প্রভাবক ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি প্লাটিনাম ন্যানোপার্টিকেল দিয়ে গঠিত। আকাররে মাত্র দুই ন্যানোমিটার। দলটি পেরোভস্কিটেকে বেঁছে নিয়েছে কারণ এটি উচ্চ তাপমাত্রায় ও চাপে  স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং শক্তি রুপান্তরে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।

প্লাটিনাম ন্যানো পার্টিকেলের ইলেক্ট্র-মাইক্রগ্রাফ

ন্যানোকিউবে ন্যানোপার্টিকেল গুলো জমানোর জন্য, দলটি এটোমিক লেয়ার ডিপজিশন টেকনিকটি ব্যবহার করেছে, যেটি কিনা ন্যানোপার্টিকেল গুলো কে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

নিয়ন্ত্রিত চাপ ও তাপমাত্রায় , প্রভাবকটি প্লাস্টিকের কার্বন-কার্বন বন্ধন ছেদ করে উচ্চমানের তরল হাইড্রকার্বন তৈরি করে। এসব তরল মোটরের তেল, লুব্রিকেন্ট, মোম, ডিটারজেন্ট তৈরির উপাদান এবং প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রভাবকটি অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রভাবকের বিপরীত, যেগুলো কিনা নিন্মমানের অসংখ্য ছোট ছোট হাইড্রোকার্বন তৈরি করে, যেটি কিনা পণ্যের মান কমিয়ে ফেলে।

যেখানে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক গলালে কিংবা প্রচলিত ক্যাটালিস্ট ব্যবহার করলে গ্রিন হাউস গ্যাস এবং বিষাক্ত বাই প্রডাক্ট তৈরি হয় সেখানে এই প্রভাবকের আরোও একটি ভালো দিক হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় অনেক কম বর্জ্য উৎপন্ন হয়।

তথ্যসুত্রঃ

Comments are closed.