USS Eldridge জাহাজ কি আদৌ অদৃশ্য করা হয়েছিলো? পর্ব-২

তৎকালীন নৌবাহিনীর অনুরোধে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সরকার গবেষণাটিতে উৎসাহ দেখান।

গত পর্বে আমার জেনেছি Project Rainbow নিয়ে যেখানে নায়কের ভূমিকা পালন করে ধ্বংসাত্মক রনতরী USS Eldridge. Eldridge এর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে যে রহস্যের সূচনা করা হয়েছিল আজ লেখব সেই বাকি গল্পটা সমাধান করব অদৃশ্য হওয়ার রহস্য। তো কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

তৎকালীন নৌবাহিনীর অনুরোধে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সরকার গবেষণাটিতে উৎসাহ দেখান। অতপর অক্টোবর ২৮,১৯৪৩ সালে পুনরায় পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এবার ক্রুসহ। তারপর ভয়ঙ্কর যে বিষয়টা ঘটে তা হচ্ছে Eldridge ফিরে আসার পর, জাহাজে অবস্থান করা ক্রুদের side effect ছিল প্রচন্ড রকমের ভয়াবহ। অনেকে অসুস্থ হয়ে পরে। অনেকে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যায়। অনেকে আবার পাগলও হয়ে যায়।

তবে এখানে একটা কথা প্রচলিত সেদিন নাকি কারো কারো শরীর গলে জাহাজের ইস্পাতের সাথে লেগে গিয়েছিল আবার কেউ কেউ নাকি আজও ফিরে আসে নি। এমনও শোনা যায় যে কিছু ক্রু নাকি এই ঘটনার পর কিছু অবিশ্বাস্য ক্ষমতা লাভ করেন; যেমন কোনো কিছু ভেদ রে চলে যাবার ক্ষমতা বা হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া।

এই বিষয়ে লোকমুখে একটা গল্প প্রচলিত আছে। ঐ ঘটনায় যেসব নাবিক নাকি বেঁচে ছিল তাদের মধ্যে একজন এক সন্ধ্যায় তার পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে রেস্তোরাঁয় বসে ছিল। হঠাৎ সে নাবিক উঠে রেস্তোরাঁর দেয়ালের দিকে হাটা শুরু করে তারপর একসময় দেয়ালের সাথে মিলিয়ে যায়।

সরকার পুরো বিষয়টিতে যথেষ্ট গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিল। এই পরীক্ষার পর যারা বেঁচে ফিরে আসতে পেরছিল তারা স্বীকার হয় Brain wash এর। যার ফলে তাদের অনেকরই পরবর্তীতে এই পরীক্ষার কথা আর মনে ছিল না।

এই ঘটনার পর অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ দেখায়। তাদের মধ্যে Moris K. Jessup ছিলেন অন্যতম। এই experiment এর কথা কোনোদিনই সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় নি। কিন্তু কথাগুলো বেফাঁস হয়ে সাধারণ জনতার মাঝে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। লেখালেখি শুরু হয় সমসাময়িক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বইপত্রে।

Moris K. Jessup

Astrophysics, Astronomer, Mathematician এবং Moris Jessup এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি Unified field theory এবং Project Rainbow কে ঘিরে অনেক রহস্যের সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন। একসময় সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন একসময় সমাধানের কাছাকাছি পৌছে যান। তারপরই ঘটে একটা আজব বিষয়। তিনি হঠাৎ করেই তার গবেষণা বন্ধ করে দেন।পরবর্তীতে এর কারণ হিসেবে অদ্ভুত এক ঘটনার বিবরণ দেন।

১৯৫৬ সালের ১৩ই জানুয়ারি Jessup হঠাৎ একটা অদ্ভুত চিঠি পান Carlos Miguel Allend নামক একজনের কাছ থেকে। Allend ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাবিক ছিলেন। Allend ; Jeshop Unified Field Theory নিয়ে আর কাজ না করতে অনুরোধ করেন। Allend তার চিঠিতে লিখেছিলেন, “১৩ বছর আগের মহাকর্ষ আর electromagnetism নিয়ে U.S সরকারের গবেষণার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। “কিন্তু Allend কেন নিষেধ করেছিলেন তার কারণ আজও জানা যায়নি।

Jessup এই ঘটনার পর আর কখনো এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলেন নি। ধারণা করা হয় Jessup এই বিষয়ে এমন কিছু জানতেন যা হয়তোবা মানব সভ্যতার ধারাবাহিকতাকে থমকে দাঁড়া করাতে পারে অথবা এমন কিছু যা আমাদের চিন্তার বাইরে বিদ্যমান অবিশ্বাস্য সত্য।

Rainbow Project এর পরপরই আইনস্টাইন তারা Unified Field Theory কে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে সরকারিভাবে এই Project এবং থিওরিকে নিষিদ্ধ করা হয় যা আজও বিদ্যমান।

তাই আজও বিজ্ঞানের কোথাও এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় নি। কিন্তু ইতিহাস সেটাকে ভুলে যায় নি। হয়ত ভবিষ্যতে এই বিস্মৃতি রহস্য তার সমাধান নিয়ে ফিরে আসবে।

ব্যাখা সমূহঃ

Project Rainbow :
জুলাই ১৯৪৩, আমেরিকার Delaware Bayতে নৌবাহিনী বা যুদ্ধযাহাজ সম্পর্কিত গবেষণা করার জন্য ধ্বংসকারী U.S.S Eldridge কে নিয়ে আসা হয়। এই গবেষণার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল  U.S.S Eldridge কে অদৃশ্য ও দুর্ধোধ্য করা। প্রকল্পটির আধিকারিক নাম প্রজেক্ট রেইনবো, কিন্তু এই অপারেশনটি সাধারণভাবে Philadelphia Experiment নামে পরিচিত।

Unified Field Theory:
এই থিউরি অনুযায়ী কোনো স্থানে আলোকে যদি কোনোভাবে এমনকরে বন্দী করো রাখা যায় যে সেখান থেকে আর কোনো আলো বের হবে না বা প্রবেশ করতে পারবে না তাহলে ওই স্থানে পৃথিবীর সময়কে থামিয়ে দেয়া সম্ভব। ফলে ঐ স্থানে মহাকর্ষ বলের কোনো প্রভাব থাকবে না।

Experiment এ ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সরঞ্জামগুলি হচ্ছে-

বৃহৎ আকারের ২ টি জেনারেটর লাগিয়েছিল যেখানে জাহাজের Forward Gun Turret ছিল

  • জাহাজের ডেকের উপরে ৪ টি চৌম্বক কয়েল লাগানো হয়েছিল।
  • এছাড়াও জাহাজের ডেকে ৩টি RF ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছিল।
  • 3000 “6L6” পাওয়ার এম্প্লিফায়ার টিউব ২ টি জেনারেটরের ফিল্ড কয়েল চালানোর জন্য সংযুক্ত করা হয়েছিল।
  • বিশেষ সমন্বয় মড্যুলেশন সার্কিট এবং একটি বিশেষ হোস্ট হার্ডওয়্যার।

জাহজটি কিভাবে অদৃশ্য হত?

যন্ত্রগুলো চালানো হলে, যন্ত্রগুলি ব্যাপকভাবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র উৎপন্ন করতে সক্ষম হতো। প্রচন্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র উৎপন্ন করতে সক্ষম যন্ত্রগুলিকে সঠিক ভাবে কনফিগার করা হয়েছিল যাতে সব কিছু ঠিক থাকে। যন্ত্রগুলি ব্যাপকভাবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র উৎপন্ন করার মাধ্যমে জাহাজের চারপাশে আলো এবং রেডিও তরঙ্গকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুলাই, ১৯৪৩ সালে যন্ত্রগুলো থেকে সৃষ্ট  ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র ৯০০ ঘন্টার মধ্যে U.S.S Eldridge কে অদৃশ্য করে ফেলে। জেনারেটরের ক্ষমতা চালু থাকার কারণে জাহাজে ধীরে ধীরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র বাড়তে থাকে। একটি সবুজ কুয়াশা জাহাজ enwrap দেখা গিয়েছিল যা পরবর্তীতে জাহাজকে আবার দৃশ্যমান করে তলে। U.S.S Eldridge জাহাজটি কেবলমাত্র কিছু মুহুর্ত আগেই অদৃশ্য ছিল যা রহস্যময় ভাবে আবার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্রঃ

১. e-telescope.gr ২. wikipedia.org. gizmodo.com

Comments are closed.