বহুকাল ধরেই বিজ্ঞানীরা জীবের বসবাস উপযোগী গ্রহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। সব গ্রহে তো আর জীব বসবাস করতে পারে না। জীবের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের যোগান তো দিতে হবে।
আমরা জানি প্রতিটি গ্রহ কোন না কোন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে তার নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আছে। আর প্রতিটি গ্রহ তার শক্তি পেয়ে থাকে এসকল নক্ষত্র থেকে। যেভাবে আমাদের পৃথিবী তার সকল শক্তি পেয়ে থাকে সূর্য নামক নক্ষত্র থেকে। প্রতিটি নক্ষত্রের আলাদা আলাদা সীমানা রয়েছে। এই সীমানা নির্ভর করে নক্ষত্রের আকার তথা তার আকর্ষণ শক্তির উপরে।
হ্যাবিটেবল জোন ও সুপার আর্থ
প্রতিটি নক্ষত্রের সীমানার মধ্যে হ্যাবিটেবল জোন নামে একটি অঞ্চল থাকে। এই হ্যাবিটেবল জোন হচ্ছে জীবের বসবাসের উপযোগী এলাকা। হ্যাবিটেবল জোন নির্ণয় করা হয় প্রতিটি নক্ষত্রের শক্তিমাত্রার উপর ভিত্তি করে। শক্তিমাত্রা অনুযায়ী যে স্থানে তাপমাত্রা ও প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ জীবের বসবাস উপযোগী সেটিই হল হ্যাবিটেবল জোন। আর নক্ষত্রের শক্তিমাত্রা নির্ভর করে নক্ষত্রের ভর, আকার ও জ্বালানীর উপর।
বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হ্যাবিটেবল জোনে থাকা এক পাথুরে সুপার আর্থের খোঁজে।
হ্যাবিটেবল জোন কি তা তো ইতোমধ্যেই সকলে জেনেছি। পৃথিবীর তুলনায় ভরের দিক দিয়ে বড় কিন্তু ইউরেনাস বা নেপচুনের মত দানবাকার গ্রহের তুলনায় ছোট গ্রহকে বলা হয় সুপার আর্থ। আর এই গ্রহটি পাথুরে বা পাথরের তৈরি হলে তা অক্সিজেন ও পানির উপস্থিতির জন্য সম্ভাবনাময়। কিভাবে সম্ভাবনাময়? জানতে ক্লিক করুন এখানে।
দে মনট্রেয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এক্সোপ্ল্যানেটসের প্রফেসর Björn Benneke তার ডক্টোরাল ছাত্র কারোলিন পায়োলেট ও আরো কিছু সহযোগীদের নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্র অনুযায়ী K2-18b নামক এক এক্সোপ্ল্যানেটে পানির (বাষ্প) সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সেখানকার বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘের মাঝেও তরল পানি রয়েছে।

বলে রাখি এক্সোপ্ল্যানেট হল আমদের সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত সকল গ্রহের সাধারণ নাম। অর্থ্যাৎ ভিন্ন সৌরজগতের সকল গ্রহকেই এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়।
K2-18b
K2-18b গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৮-৯ গুণ ভারী। গ্রহটি তার নক্ষত্র K2-18 এর সাপেক্ষে হ্যাবিটেবল জোনে অবস্থিত। এই গ্রহটি একটি এম-টাইপ নক্ষত্রকে আবর্তন করছে। নক্ষত্রটি সূর্যের তুলনায় ছোট এবং ঠান্ডা। কিন্তু গ্রহটি তার নক্ষত্রের খুবই নিকটে অবস্থিত। ফলে আমাদের পৃথিবী সূর্য হতে যে পরিমাণ শক্তি গ্রহণ করে K2-18bও তার নক্ষত্র থেকে ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি গ্রহণ করে থাকে। ফলে K2-18b এর তাপমাত্রাও জীবের জন্য বসবাসযোগ্য। ইংরেজিতে একে বলে হ্যাবিটেবল টেমপারেচার।

পৃথিবী ও এই এক্সোপ্ল্যানেটটির মাঝে অনেক কিছুরই মিল রয়েছে। এস্ট্রনমারদের ধারণা K2-18b এর বায়ুমণ্ডলে মেঘের মাঝে পানির ঘনত্ব সামনে আরো বৃদ্ধি পাবে। আর তখন তরল পানির বৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমনটা হলে সেখানেও পৃথিবীর মতো ওয়াটার সাইকেল গড়ে উঠবে। এই অনুসন্ধান চালাতে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছিলো।
এই এক্সোপ্ল্যানেটটির অবস্থান পৃথিবী হতে প্রায় ১১০ আলোকবর্ষ দূরে। প্রফেসর বেনেকে এবং তার দল ২০১৬ সালে স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে সর্বপ্রথম K2-18b গ্রহের আবিষ্কার করেন। সেই সময়ে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ.ডি ছাত্র রায়ন ক্লটিয়ার গ্রহটির ব্যাসার্ধ ও ভর নির্ণয় করে।

বর্তমানে K2-18b গ্রহটির উপর একটি পাতলা গ্যাসীয় পর্দা অবস্থান করছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই গ্যাসীয় পর্দা জীবের আগমনের ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করছে। তারপরও গ্রহটি যেহেতু হ্যাবিটেবল জোনে রয়েছে এবং পানির অস্তিত্বও রয়েছে। পাশাপাশি গ্রহটিতে ওয়াটার সাইকেল চালু হওয়ারও একটি সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেখানকার পরিবেশও তরল পানির জন্য উপযোগী। তাই বিজ্ঞানীরা এখনই আশা ছাড়ছেন না।
বিজ্ঞানীরা এখন পানি ও ভিনগ্রহী জীবের খোঁজে অবজার্ভেবল ইউনিভার্সের প্রায় সকল হ্যাবিটেবল জোনের গ্রহগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। হয়তো খুব দ্রুতই আমরা ভিনগ্রহী জীবের দেখা পাবো।
প্রফেসর বেনেকের মতে, এটাই ভিনগ্রহী জীবেদের খোঁজার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ এবং খুব দ্রুতই প্রমানিত হবে যে পৃথিবীবাসীরাই জগতের একমাত্র জীব না।
তথ্যসূত্রঃ Sciencedaily, Universetoday
জারর্নাল রেফারেন্সঃ Björn Benneke, Ian Wong, Caroline Piaulet, Heather A. Knutson, Ian J.M. Crossfield, Joshua Lothringer, Caroline V. Morley, Peter Gao, Thomas P. Greene, Courtney Dressing, Diana Dragomir, Andrew W. Howard, Peter R. McCullough, Eliza M.-R. Kempton Jonathan J. Fortney, Jonathan Fraine. Water Vapor on the Habitable-Zone Exoplanet K2-18b. Astronomical Journal (submitted), 2019 [লিঙ্ক]