মৃত্যুর পর মানুষের কি হয়? বিজ্ঞান এ সম্পর্কে কি বলে?

আমরা সবাই জানি যে প্রকৃতিতে যেসব জিনিসের একবার আবির্ভাব হয় তার সবকিছুই একদিন পতন হয়। যেমন ধরুন মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, গ্রহ-নক্ষত্র, এমনকি ব্ল্যাক হলও। আর এসব ঘটনা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। জার কারণে, আজকালকার কিছু মানুষ আগে থেকেই উৎসাহবোধ করে মৃত্যুকে নিয়ে।তারা তাদের উৎসাহ ব্যক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে ফেসবুকে “একদিন তো মরেই যাব” বলে স্ট্যাটাসও দেয়।কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষ যাদের মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করে তারা মৃত্যুর ব্যাপারে ভাবলেই ভয় পেয়ে যায় এবং এই ব্যাপারে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে। কিন্তু একটি বিষয়ে আমাদের সবার মাথায় একবার হলেও এসেছে একটা প্রশ্ন যে, মৃত্যুর পর কি হয়।

তাই আজকের পোষ্টে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং সায়েন্টিফিক ও লজিক্যাল দিক থেকে ভাবার চেষ্টা করব। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যুক্ত এই পোস্টটি।

যেমন আমরা জানি, পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই একটা মান্যতা রয়েছে যে এই জীবনের পরে আরো কিছু আছে। কিন্তু কিছুদিন আগে এই বিষয়ে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাকআপও পাওয়া যায়।

কিছুদিন আগে জার্মানিতে একটি রিসার্চ করা হয়েছিল যেখানে কিছু অস্বাভাবিক জিনিস লক্ষ্য হয়েছিল। রিসার্চের জন্য এমন কিছু পেশেন্টের উপর লক্ষ্য রাখা হয়েছিল যারা কিনা কোমায় ছিল এবং এমন কিছু পেশেন্ট ছিল যাদের মাথার কিছু অংশ কিছু সময়ের জন্য কার্যকরী ছিলনা। এদের মাথা বা ব্রেন সম্পূর্ণভাবে কন্সাস ছিলনা। ঠিক হওয়ার পর তারা তাদের কিছু এক্সপেরিয়েন্সের কথা বলেছিল। যেগুলো সায়েন্সের ব্যাখ্যা থেকে একটু আলাদাই ছিল। এগুলোকে পরবর্তীকালে বলা হয় NDE অর্থাৎ Near Death Experience

এই অনুভূতিগুলো ইশারা করেছিল যে জীবনের পরও একটি Afterlife রয়েছে। এক্সপেরিমেন্টের ফলাফলে উঠে এসেছিল যে ৪৫% লোক Near Death Experience করেছিলেন। যেখানে তারা প্রথমেই জেনে গিয়েছিল যে তারা মরে গিয়েছে। সেখানে ২৫% লোকের জন্য এটি একটি খুশিতে ভরা অনুভূতি ছিল। ১২% লোক Out Of Body Experience করেছিল। অর্থাৎ তারা নিজেদের শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে ঘরের উপর থেকে তাদের নিজেদের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল। এবং ১৭% লোক কোন মৃত মানুষের সাথে কথা বলেছিলেন। তাছাড়া বাকি পেশেন্টরা দূর থেকে আসা তীব্র আলো দেখতে পান যা ছিল লাল ও কিছুটা হলদে রঙের। নিজেদের মরে যাওয়া কিছু পূর্ব বংশধরদের ও দেখতে পান। আর কেউ কেউ হঠাৎ করে অনেক খুশির অনুভূতি পান আবার ভয়ের অনুভূতি পান। কিন্তু এই স্টাডি সম্পূর্ণ ব্যাখ্যায়িত ছিলনা। আর বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট তো কখনো কিছু সংখ্যক লোকের ওপর নির্ভর করে না। তাই এই এক্সপেরিমেন্টের জন্য তারা আলাদা আলাদা জায়গায় আলাদা আলাদা মানুষের উপর আলাদা আলাদা ধরনের পেশেন্টের উপর এক্সপেরিমেন্ট চালায় এর জন্য তারা USA UK এবং অস্ট্রেলিয়ায়।

এবার পেশেন্টের সংখ্যাও বেশি ছিল এবং আলাদা আলাদা রিসার্চার আলাদা আলাদা পেশেন্টের উপর আলাদা আলাদা রিসার্চ করছিল। রিসার্চ থেকে জানা যায় মৃত্যু কোন একটি ঘটনা নয় মৃত্যু হল একটি প্রক্রিয়া।

যা কিনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গার কোষ মরে যাওয়ার ফলে হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সঠিক ট্রিটমেন্ট এর দ্বারা reward করা যেতে পারে। আর এটাই ডাক্তারেরা চেষ্টা করে থাকে। তো এই নতুন স্টাডিতে যেটা পাওয়া যায় সেটা কিছুটা এমন:-

সব পেশেন্টের মধ্যে মাত্র ৯% মানুষ NDE অর্থাৎ Near Death Experience রিপোর্ট করেছেন। আর মাত্র ২% লোক নিজেকে নিজেদের শরীরের বাইরে অনুভব করেন অর্থাৎ Out Of Body Experience। বিজ্ঞানীরা এটাও খোঁজ করেছেন যে মৃত্যুর কাছাকাছি আমাদের মস্তিষ্ক অক্সিজেনের অভাবে আমাদের ব্রেনের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়ে যায় আর এই কারণেই আমরা অনেক অস্বাভাবিক বিষয় অনুভব করি। এবং এটাও পাওয়া গেছে মরার সময় আমাদের ব্রেন Rame Instration Stage চলে যায়।

যেখানে কিনা আমাদের ইন্দ্রিয় থেকে আসা তত্ত্ব মিশে যায়। আর আমাদের ব্রেন একধরনের হেলিউশান সৃষ্টি করে আর যেহেতু এগুলো আমাদের ব্রেনের ভিতরেই হতে থাকে তাই আমাদের অন্যান্য অংশগুলো সচল না থাকলেও আমরা এটা অনুভব করতে পারি যে কারণে আমাদের Near Death Experience হয়ে থাকে। এছাড়া বেশিরভাগ লোকেদের দেখার তীব্র আলোর কারণ, অপারেশন থিয়েটারের চমকানো লাইট যেটা কিনা একটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।

তাছাড়া শরীর থেকে বাইরে আসার অনুভূতি টেস্ট করার জন্য পেশেন্টের রুমের অপারেশন টেবিলের একটি স্ট্যান্ডে একটি চিঠি রাখা হয়েছিল যাতে মৃতপ্রায় ব্যক্তি তার শরীর থেকে বের হয়ে উপর থেকে নিজেকে দেখতে পারলে সেই চিঠিটি ও পড়তে পারবে। কিন্তু এরকম টা কখনোই হয়নি কেউ সেই চিঠিটিকে পড়তে পারেনি।

এরপর আরো কিছু রিসার্চ করা হয় এবং তার রেজাল্টও একই রকম আসে। এসব থেকে আমরা জানতে পারি যে মরবার পর যেসব প্রক্রিয়ায় আমাদের মস্তিষ্কেও দেহে চলতে থাকে যেগুলোকে আমরা খেয়াল করতে

পারি এবং বিজ্ঞান সে গুলোকে এক্সপ্লেইনও করতে পারে।

এবার আমরা আলোচনা করব বিজ্ঞানের হিসাবে মরবার পর কি হয়।

তো এবার যেগুলো বলব সে সবগুলো কথাই সায়েন্টিফিক ভিউ থেকে হবে।

যখনই আমাদের হূৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায় ব্রেনে অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক গ্রহণ করে ফেলে তারপর ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের সকল প্রক্রিয়া বন্ধ হতে থাকে আর যে হরমোনগুলো মস্তিষ্ককে সাপোর্ট করত সবগুলো অঙ্গ পরিচালনা করার জন্য তাও বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলে শরীরের সব কোষে Instruction পৌছায়না ফলে এসব কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এরপর যেটা হয় সেটাকে আমরা বলি Post Death Process। এখানে শরীরের সব muscle relax হয়ে যায় কারণ তারা আর কোন অক্সিজেনই পায়না। ফলে Muscle, Burn এবং Trains হতে থাকে। এর জন্য মরার সময় অনেক সময় পেশেন্ট টয়লেট করে ফেলে। এখন যেহেতু পেশেন্ট মেডিকেলে মারা গেছে তার মানে এই নয় যে শরীরের ভেতর সবকিছু মরে গেছে কারণ সেই সময় ও কিছু কোষ তবুও বেঁচে থাকে এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তিকে খরচ করতে থাকে আর আমাদের শরীরের ১০০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া তখনো বেঁচে থাকে আর এই ব্যাকটেরিয়া সারাজীবন আমাদের ত্বকে আমাদের সাথেই বাঁচতে থাকে। এবং শরীর মারার পরও এদের অনেক বড় যোগদান থাকে। আর মরার পর শরীর ধীরে ধীরে মাইনাস Temperature আসতে থাকে কারণ শক্তির উৎপাদন আর হয়না আর হৃৎপিণ্ড ছাড়া রক্ত শরীরের নিচের দিকে জমতে থাকে এই রক্ত দুই ঘন্টা পরে Colt হতে থাকে এবং থেকে ফরেনসিক ডাক্তার বলতে পারেন যে, শরীর মরার পর নাড়ানো হয়েছে কিনা তারপর ঘণ্টা পর ক্যালসিয়াম Muscles প্রোটিনের সাথে কম্বাইন্ড হতে থাকে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় rigor mortis এ সময় শরীরের decomposition শুরু হয়ে যায় এবং এ সময় শরীরের কোষগুলো মারা যায় যেহেতু সার্কুলেশনের প্রক্রিয়া হয়না তাই শরীর মৃত কোষগুলিকে পরিষ্কার করতে পারেনা এই কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কোষে বাড়তে থাকে যেটা তাদের PH Value কে বাড়িয়ে দেয়। এজন্য Cells Membranes দুর্বল হতে থাকে এবং ভেতরের যাবতীয় কোষগুলোকে বাইরে রিলিজ করতে থাকে যার ফলে শরীরের রং বদলাতে শুরু করে আর উৎপন্ন করে আলাদা আলাদা রকমের গ্যাস। আর এই গ্যাসের সাথে নিষ্কৃত হয় তীব্র গন্ধ আর এই নির্গত গন্ধে পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে যা শরীরে ডিম পাড়তে শুরু করে। একটি মাছি নির্দিষ্ট সময়ের ৩০০ টিরও বেশি ডিম পাড়তে পারে।

এই পোকারাই পরে একত্রিত হয়ে শরীরকে খেতে থাকে, যতক্ষণ না তারা বিকশিত হতে পারে। এতে আরও কিছু গ্যাস উৎপন্ন হয় যা গন্ধকে আরো বেশি তীব্র করে। এই স্টেজ ১ বছর পর্যন্ত চলতে পারে আর এরপর শুধু Indigestible  জিনিস যেমন শুধুমাত্র চুল, হাড়গোড় এগুলোই বেঁচে থাকে যেগুলোকে কিছু বছর পর পশুপাখি গাছপালা অবজার্ভ করে নেয় এবং শরীর পুরোপুরি মাটিতে মিশে যায়।

তো বিজ্ঞানীদের মতে এরকমটাই হয় মৃত্যুর পর আমাদের শরীরে যা শুনে অনেকটা অদ্ভুতই লাগে। এরকমটা ভাবতে হয়ত আমরা পছন্দ করিনা তাই আমরা afterlife বিশ্বাস করতে পছন্দ করি।

 

আর হ্যাঁ এই পোস্টটি যদি আপনাকে নিরাশ করে থাকে তাহলে আমি বলব আমরা তো কিছুদিনই বাঁচবো। আর এই কিছুদিনের মধ্যেই আমরা চেষ্টা করব পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>