দেজা ভ্যু (Deja vu) রহস্য

আচ্ছা! তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছো যে,কোন একটি স্থান কিংবা বিশেষ জায়গা দেখলে মনে হয় এর আগেও জায়গাটি দেখেছো? কিন্তু আদৌ তা দেখার কথা নয়। উত্তরটা বোধহয় অনেকেরই হ্যাঁ হবে। বাস্তবিক দিক থেকে আমার একটা উদাহরণ বলি, গত বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রথমবারের মতো যখন আমার ফুপুর বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন একটা বিষয় আমাকে খুব ভাবিয়েছিল। বিষয়টি হচ্ছে ফুপুদের বাড়ীর পিছনের একটি পাহাড় দেখা মাত্রই আমার বার বার মনে হতে লাগলো পাহাড়টি এর আগেও আমি দেখেছি। অথচ এর আগে পাহাড়টিকে দেখার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তবে কি এটা আমার মনের ভুল ছিলো? অবশ্যই না, এরূপ ঘটনা অনেকের সাথেই অহরহ ঘটছে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় দেজা ভ্যু (Deja vu)।

দেজা ভ্যু কী:

দেজা ভ্যু (Deja vu) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘ইতিমধ্যে দেখা’। এটি একটি ফরাসি শব্দ। যাকে ইংরেজি তে বলা হয় “Already seen”। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে কখনো কখনো  এমন কিছু বিষয়ের সম্মুখীন হই যা আমাদের নিকট নতুন হলেও, মনে হয় এর আগেও আমরা এটার সম্মুখীন হয়েছি। এমন পরিস্থিতিকেই বলা হয় দেজা ভ্যু।

অনেকেই দেজা ভ্যু কে  একটি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে দেজা ভ্যু  মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া মাত্র। আমাদের প্রত্যেকেরই মাঝে মধ্যে কোনো অপরিচিত বিষয়বস্তুকে অনেক পরিচিত মনে হয়, আমরা ভাবি এর আগেও আমরা এটার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু তা সম্পূর্ণ মস্তিষ্কের কারসাজি।

দেজা ভ্যু কেনো হয়?

দেজা ভ্যু এর মূখ্যত কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় আমাদের মস্তিষ্কের সাময়িক স্থবিরতাকে। তবে স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়াও দেজা ভ্যুর অন্যতম আরেকটি কারণ। আমাদের মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অঙ্গগুলো মাঝে মধ্যে কোনো সমসাময়িক বিষয়কে এমনভাবে মস্তিষ্কে গেঁথে ফেলে যে, এর ফলস্বরুপ হিসেবে সমসাময়িক ঘটনাগুলোকে এমন মনে হয় যেন এর আগেও ঘটনাগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় ছিলো। অথচ এসব ঘটনা কেবলই আমাদের সামনে উপস্থিত হলো।

প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা দেজা ভ্যুর সাথে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, দেহের রাসায়নিক ক্রিয়া, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদির সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তবে এর যুক্তি-সম্মত কোনো কারণ দেখাতে পারে নি। ফলে তাদের এরুপ মতবাদ সম্পূর্ণই অগ্রাহ্য হয়। তবে দেজা ভ্যু কে নিয়ে গবেষণা এখনো পুরোদমে চলছে।

দেজা ভ্যু নামটি প্রচলিত হবার বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন সাহিত্যিক এবং মনস্তাত্ত্বিকের লেখনীতে এই ধরনের পরিস্থিতির বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তখন পুরো বিষয়টি এককথায় প্রকাশের জন্য কোনো নাম ছিল না। ফরাসি মানসিক বিশ্লেষক এমিল বোইরেক সর্বপ্রথম এই নামটি ব্যবহার করেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মানসিক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ (L’Avenir des sciences psychiques) নামের একটি বই লিখেন। বইটির একটি প্রবন্ধে তিনি দেজা ভ্যু শব্দ দুটি ব্যবহার করেন।

দেজা ভ্যু এর বিপরীত হিসেবে ব্যবহার করা হয় জেমাইস ভ্যু কে। এটিও একটি রহস্য। জেমাইস ভ্যু এর প্রভাবে মানুষ তার চেনা বিষয়গুলো ভুলে যায়। এ প্রক্রিয়ায় মানুষ অনেক চেনা বিষয়গুলোকেও মনে করে প্রথমবার দেখছে। দেজা ভ্যু এবং জেমাইস ভ্যু দুটোই বর্তমান বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য। অনেকেই এই বিষয়গুলোর সাথে আগের জন্মের মিল থাকতে পারে বলে সম্ভাবনা করছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন সম্পূর্ণই ভিন্ন কথা। তাদের মতে দেজা ভ্যু কিংবা জেমাইস ভ্যু হওয়ার মূখ্য কারণ মানুষের স্নায়বিক সংবেদনশীলতা। দেজা ভ্যু বিষয়টিকে নিয়ে এখনো অনেক গবেষক কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তথ্য সহযোগীতায় : frontiers.org

 

[mc4wp_form id=”4170″]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>