বুদ্ধি আর Intelligence, এ দুটি শব্দ মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার সময় মনে যা আসে তা হচ্ছে মগজ বা মাথা। সত্যিকার অর্থে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে বুদ্ধির যথাযথ সংজ্ঞা নেই তারপরও মনোবিজ্ঞানে এর স্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সংজ্ঞা যে একেবারেই নেই তা নয় অনেক বিজ্ঞানী অনেক ভাবে বুদ্ধিকে সংজ্ঞায়িত করছেন। বুদ্ধির সংজ্ঞা হিসেবে ইংরেজ শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানী সিরিল বার্ট বলেছেন,
” বুদ্ধি হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নতুন অবস্থা ও নতুন সমস্যার সাথে সংগতি সাধন করে দেহমনের চলবার সাধারণ ক্ষমতা।”
মাথার উপর দিয়ে যেতে পারে অনেকের বুদ্ধির মতই জটিল মনে হতে পারে কিন্তু জটিলের মাঝেও সহজ কথায় বুদ্ধাঙ্ক গবেষক আরেক মার্কিন মনোবিদ থ্রাস্টোন বলেছেন,” বুদ্ধি হলো সহজাত প্রবৃত্তি সমূহকে সমাজের উপযোগী করে কাজে লাগাবার ক্ষমতা ”
তবে সেই যাই হোক সহজ কথায় বলতে পারি একজন মানুষ দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে মস্তিষ্ক কে কাজে লাগিয়ে যে কৌশল ব্যবহার করে তাই বুদ্ধি।
কিন্তু বুদ্ধি নিয়ে বুদ্ধি খাটানোতে পিছিয়ে থাকেন নি মনোবিজ্ঞানীরা তাই বুদ্ধি নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব বা মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তত্ত্বের কথা না বললেই নয়। সেগুলি হচ্ছে
★ Spearman’s two factor theory
★ Thomson’s sampling Theory আবার অনেকেই একে Thorndike’s multi factor theory বলেন।
★ Thustone’s primary mental ability theory
★ Guil ford’s theory of Intellect.
আসুন প্রথমেই জানা যাক Spearman’s two factor theory সম্পর্কে। Two factor বা দ্বি উপাদান শব্দটি থেকেই বোঝা যায় তত্ত্বটি দুটি উপাদান নির্ভর। ঘটনাটি ১৯০৪ এ ” American Journal of psychology” তে বুদ্ধি সমন্ধে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কিত মতবাদ উপস্থাপন করা হয়। উক্ত মতবাদে ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী স্পীয়ারম্যান গানিতিক যুক্তির মাধ্যমে বুদ্ধিকে বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন,” মানুষের প্রত্যেকটি বুদ্ধিমুলক কাজ কে বিশ্লেষণ করে দুটি উপাদান পাওয়া যাবে একটি হচ্ছে তার সাধারন সামর্থ ( General ability) এবং অন্যটি বিশেষধর্মী সামর্থ ( Special ability) ” স্পেরীয়ম্যান সাধারণ মানসিক সামর্থ্য কে G এবং বিশেষ মানসিক সামর্থ্য কে S দ্বারা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন মোটামুটি সকল কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রেই G উপস্থিত থাকে এবং বিশেষ বিশেষ কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে S ব্যবহার করা হয়। তবে সকল কাজের ক্ষেত্রে অব্যশই G এর ব্যবহার থাকবে। অর্থাৎ তার তত্ত্বের মুল কথা হচ্ছে কোন ব্যক্তির বুদ্বি হচ্ছে তার সাধারণ ও বিশেষ মানসিক শক্তির যোগফল।
চিত্রটি লক্ষ্য করলে বিষটি আরো পরিস্কার হবে।
G বৈশিষ্ট্য বর্ননায় তিনি বলেন,
১. এটি মানুষের জন্মগত ভাবে প্রাপ্ত শক্তি
২. এটি একটি ধ্রুবক শক্তি
৩. G এর পরিবর্তন ব্যক্তি অনুপাতে ভিন্ন হতে পারে
৪. G এর উপর নির্ভর করে ব্যক্তির কর্মের সফলতা।
S হচ্ছে
১. ব্যক্তির পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত মানসিক শক্তি
২. কর্মদক্ষতার উপর এটি পরিবর্তিত হতে পারে
৩. কাজের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এটি ভিন্ন হতে পারে।
তবে এটি বুদ্ধি বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব হওয়ায় সমালোচনাও কম হয় নি তত্ত্বটির। আমেরিকার আরেক মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইক সর্বপ্রথম এই মতবাদের সমালোচনা করেন। তার মতে কার্যসম্পাদনে শুধু মাত্র দুটি উপাদানের ব্যবহার হতে পারে না।
তিনি বলেন, ” কর্মদক্ষতা হচ্ছে অনেক গুলো বিশেষ বিশেষ স্বাধীন ক্ষমতার সমন্বয়।”
তবে তিনিও বৌদ্বিক ক্রিয়ার মধ্যে একটি সাধারণ উপাদানের সন্ধান করেছিলেন। পরবর্তীকালে গেডব্রে থমসন (Gedbrey Thomson) স্পীয়ারম্যানের দ্বি- উপাদান তত্ত্বের সমালোচনা করেন তিনিও বলেন, ” কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে একটি মাত্র সাধারন উপাদান নয় বরং কতগুলো ক্ষমতা বা উপাদান দলবদ্ধ হয়ে থাকে যারা বিভিন্ন মানসিক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়”।
পরবর্তীকালে স্পীয়ারম্যান তার গবেষণায় কিছুটা অসম্পূর্ণতা রয়েছে বুঝতে পারেন কারণ থমসন ও থ্রাস্টনের মত প্রমুখ মনোবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন যে শুধু মাত্র G এবং s নয় এছাড়াও বিশেষ কতকগুলো ক্ষমতা রয়েছে যারা G এবং S এর মধ্যবর্তী উপাদান । পরবর্তীতে মধ্যবর্তী উপাদানকে X দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সে ক্ষেত্রে বই পড়ার (S1) ও দাবা খেলার (S2) মনে করা হলে এদের উভয়ের ক্ষেত্রেই শ্রেণী মুলক শক্তি হিসেবে X উপস্থিত থাকবে।
বাস্তবিক দিক থেকে বিষয়টি হচ্ছে একজন মানুষ শুধু মাত্র একটি কাজ করতে সক্ষম নয় বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন বিশেষ শক্তি S ব্যবহৃত হয় তবে দুটি কাজ একই ব্যক্তি দ্বারা সংগঠিত হলে অবশ্যই এর মধ্যবর্তী সংযোগকারী হিসেবে X উপস্থিত থাকবে।
এই তত্ত্বটি হচ্ছে বুদ্ধি বিষয়ক সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম তত্ত্ব গুলোর মধ্যে একটি।