কখনো পক্স হয়েছে?তাহলে হয়ত পরিবারের লোকজনদের থেকে শুনেছেন একবার পক্স হলে আর পক্স হবে না। এর কারণ কি জানেন?সেটা নিয়েই আলোচনা হবে এই লেখায়। জেনে নেওয়া যাক ভ্যাক্সিন বা টিকা নিয়ে।
“কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা” প্রবাদটি আশা করি সবার পরিচিত। যেটা চিকিৎসা ক্ষেত্রেও সত্যি।সমাজে সবার মুখে রোগ দিয়ে রোগ সারানোর কথা প্রচলিত আছে। অর্থাৎ আমাদের যে রোগ হয় আমরা সেই রোগ দিয়ে তৈরি ঔষধ খাই বলেই আমরা সুস্থ হয়ে উঠি। হ্যাঁ, কথাটা কিছুটা সত্যি তবে সব ক্ষেত্রে নয়। কারণ,হরহামেশা জ্বর, সর্দির মত যে রোগগুলোতে আমরা আক্রান্ত হই সেগুলো সারানো হয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে।কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা কথাটা প্রযোজ্য হবে ভ্যাক্সিন বা টিকার ক্ষেত্রে।
ভ্যাক্সিন(Vaccine) কি ?
ভ্যাক্সিন বা টিকা হলো এক ধরনের পদার্থ বা মিশ্রণ যা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি জন্মাতে সাহায্য করে । যেমন :পোলিও,এনথ্রাক্স,হাম,কলেরার টিকা।
ভ্যাক্সিনের ইতিহাস
৪২৯ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে এথেন্স প্লেগে আক্রান্ত হয়। এই সময় গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসেডেডাস লক্ষ্য করেন যারা একবার স্মল পক্সে আক্রান্ত হয়েছিলো,পরে তারা আর সেই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে না।
ভ্যাক্সিনের জনক হলেন ডাঃ এডওয়ার্ড জেনার।তাকে ফাদার অব ইম্যুনিলোজি বলা হয়। যিনি ১৭৯৬ সালে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি গ্রামের মানুষদের লক্ষ্য করে দেখলেন যারা একবার কাউপক্সে আক্রান্ত হয়েছে তারা আর স্মল পক্সে আক্রান্ত হচ্ছে না। তিনি এই ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হলেন যখন তিনি খেয়াল করলেন ৮ বছর বয়সের পর তার কখনোই পক্স হয় নি।
তাই গবেষণার জন্য ১৩ বছর বয়সী এক বালককে প্রথমে কাউ পক্সে আক্রান্ত করালেন এবং দেড়মাস পরে স্মল পক্সের সংস্পর্শে আনলেন। কিন্তু ছেলেটি কাউ পক্সে আক্রান্ত হলেও স্মল পক্সে আক্রান্ত হলো না। এই তথ্যটিকে ভিত্তি করে আরো গবেষণা চালালেন এবং ১৭৯৮ সালে প্রথম স্মল পক্সের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবিত হল।
পরবর্তীতে লুই পাস্তুর,এমিল ভন বেহরিং,শিবাসাবুরো কিতাসাতোর মত বিজ্ঞানীরা আরো ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছেন।
ভ্যাক্সিনের কার্যপদ্ধতি
ভ্যাক্সিন শরীরকে রোগের সাথে লড়াই করার জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুত করতে ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু এর ফলে শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
যখন মানব দেহে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তখন রক্তের শ্বেতকণিকা সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে প্রোটিনযুক্ত এন্টিবডি তৈরি করে। সেই সাথে ওই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে রাখে শ্বেতকণিকার মেমরি সেল টি ফোর লিম্ফসাইটে । যাতে পরবর্তীতে ওই ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করলে দ্রুত এন্টিবডি প্রস্তুত করতে পারে।
এই এন্টিবডি কি উপাদান দিয়ে তৈরি করলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াটি মারা যাবে সেটা তাকে জানতে হবে। যা সম্ভব শুধুমাত্র দেহে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকলে।কারণ ওই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া তো সে ডাটা সংগ্রহ করতে পারবে না।তাহলে সেই ভাইরাস দেহে প্রবেশ করালেই তো হয়?বিষয়টা এত সোজা নয়।কারণ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করালেই তো সেটা আক্রমণ করা শুরু করবে। প্রথমবার এন্টিবডি তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। যে সময় ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া তাদের কাজ খতম করা আর আপনাকেও খতম করার জন্য যথেষ্ট।
তাই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায় শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যাতে শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলেও শরীরের ক্ষতি না হয়। এতে ওই ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্কে তথ্যও জমা থাকলো আবার অসুখও করলো না।এর পরের বার যখন ওই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার পুনরায় আগমন ঘটবে তখন আপনার দেহ খুব দ্রুত এন্টিবডি তৈরি করে ফেলবে। এটাই ভ্যাক্সিনের কার্যপদ্ধতি।
ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে কি কি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব?
১ অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)
২ হাম (Measles)
৩ রুবেলা (Rubella)
৪ কলেরা (Cholera)
৫ মেনিংগোকক্কাল ডিজিজ (Meningococcal disease)
৬ ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza)
৭ ডিপথেরিয়া (Diptheria)
৮ মাম্পস (Mumps)
৯ ধনুষ্টংকার (Tetanus)
১০ হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)
১১ পারটুসিস (Pertussis)
১২ যক্ষা (Tuberculosis)
১৩ হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)
১৪ নিউমোকক্কাল ডিজিজ (Pneumococcal disease)
১৫ টাইফয়েড (Typhoid fever)
১৬ হেপাটাইটিস ই (Hepatitis E)
১৭ পোলিও (Poleomyelitis)
১৮ টিক-বর্ণ এনকেফালাইটিস (Tick-born encephalitis)
১৯ হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Haemophilus encephalitis type-B)
২০ জলাতংক (Rabies)
২১ ভেরিসেলা এবং হার্পিস (Varicella & herpes zoster)
২২ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human papilloma virus)
২৩ রোটাভাইরাস (Rotavirus gastroenteritis)
২৪ ইয়েলো ফিভার (Yellow fever)
২৫ জাপানীজ এনকেফালাইটিস (Japanese encephalitis)
2 Comments
Rubel
র্যাবিস ভ্যাকসিন থেকে র্যাবিস ভাইরাস হতে পারে?
আমি 1ml করে ইনসেপ্টার র্যাবিস ভ্যাকসিন ৫ টা নিয়েছি (০.৩.৭.১৪.২৮) এইভাবে।
আমার টা কি অভারডোজ?
অভার ডোজে কি র্যাবিস ভাইরাস হয়? প্লিজ জানাবেন।
Akif Rafat
আক্রান্ত হবেন না।