বিগ ব্যাং ও তার পূর্ববর্তী সময় ৩টি পর্বের মাধ্যমে ব্যখ্যা করার কথা ছিলো। আজ তার ২য় পর্ব। ১ম পর্বে বিগ ব্যাং কি এবং সেটা কেনো হয়েছিলো তা ব্যখ্যা করা হয়েছে। বিগ ব্যাং এর পূর্বের ঘটনা সকলের কাছেই অস্পষ্ট। তবে অনেক পদার্থবিদই অনেক মতবাদ দিয়েছেন। এর মধ্যে চারটি থিওরি জনপ্রিয়। আজ তার মধ্য থেকেই দুইটি তত্ত্ব উল্লেখ করবো। গতপর্বে আর্টিকেলের শেষ দিকে দুটি প্রশ্নের উল্লেখ করেছিলাম। আজ তার একটি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তত্ত্ব-১: Big Bounce
এই তত্ত্বটি বিগ বাউন্স নামেই পরিচিত। ১৯৬০ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক Robert Dicke এবং James Peebles তাদের এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তত্ত্বটি ছিলো:
আমাদের মহাবিশ্বের পূর্বে আরো একটি মহাবিশ্ব ছিলো। সেই মহাবিশ্ব এক সময় সংকোচিত হতে শুরু করে এবং এক সময় সিঙ্গুল্যারিটিতে পরিণত হয়। তারপর বিগ ব্যাং এবং এর ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব।
এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব অসীম। এই অসীম মহাবিশ্ব সংকোচন-প্রসারণের একটি চক্রে আবদ্ধ। অর্থ্যাৎ এই সংকোচন-প্রসারণ ধারা কখনো শেষ হবে না। এটা চলতেই থাকবে। এটা প্রমাণিত যে আমাদের মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। এবং এক সময়ে এটা আবার সংকোচিত হতে শুরু করবে আর আমরা সেই সময়ের অপেক্ষায় আছি।
সমালোচকদের মতে এই তত্ত্ব এন্ট্রপির নীতিকে অস্বীকার করে। এন্ট্রপি কখনোই এই অনুমতি দেয় না যে হঠাৎ করে একটি মহাবিশ্ব সংকোচিত হতে হতে সিঙ্গুল্যারিটি তে পরিণত হবে। এবং তারপর আবার প্রসারিত হতে শুরু করবে।
সুতরাং এই তত্ত্বকে সত্যি প্রমাণিত করতে পদার্থবিজ্ঞানে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে।
তত্ত্ব-২
এই তত্ত্ব অনুসারে বিগ ব্যাং এর পূর্বে মহাবিশ্ব ছোট আকারের সমতল ভূমি ছিলো এবং চাপ ছিলো অনেক বেশি। তবে সুস্থিত ছিলো না। সুস্থিত হওয়ার জন্য কোন এক প্রভাবকের অপেক্ষায় ছিলো মহাবিশ্ব।
এই তত্ত্বে মহাবিশ্বকে একটি তাসের ঘরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। একটি তাসের উপর আরেকটি তাস রেখে আমরা যখন তাসের ঘর বানাই, তখন কিন্তু সেটি ভালোভাবেই দাড়িয়ে থাকে। তাই বলে তাসের ঘর সুস্থিত হয়। বাতাসের হালকা একটি ছোঁয়া তাসের ঘরকে মুহূর্তের মাঝে ভেঙে দিতে পারে।
এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের সাথেও এরকমই কিছু একটা হয়েছিলো। স্বল্প সুস্থিত অবস্থায় ছিলো মহাবিশ্ব। এবং তারপর ভেঙে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে।
এই তত্ত্ব এন্ট্রপিকে অস্বীকার না করলেও বর্তমান সময় সাপেক্ষে এন্ট্রপির সকল নীতিকে ব্যখ্যা করতে পারে না।
একটি প্রশ্নের উত্তর দিবো বলেছিলাম। গত পর্বের শেষে একটি প্রশ্ন ছিলো। সেটা হলো নক্ষত্রের জন্ম হয় কিভাবে??
একটি প্রশ্নের উত্তর দিবো বলেছিলাম। গত পর্বের শেষে একটি প্রশ্ন ছিলো। সেটা হলো নক্ষত্রের জন্ম হয় কিভাবে??
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ডার্ক ম্যাটার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ডার্ক ম্যাটার তার মহাকর্ষ বল দ্বারা হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অণু-পরমাণুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। ফলে মহাশূণ্যের বিভিন্ন জায়গায় হাইড্রোজেন গ্যাস জমা হতে থাকে। মহাশূণ্যে বিদ্যমান মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সেগুলো আবার কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। চাপের প্রভাবে সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হয়। সেই ফিউশানের কারণে গ্যাসের গোলকের মাঝে প্রচুর শক্তির সৃষ্টির হয় এবং পুরো গোলকটি আলোকিত হয়ে যায়। আর এভাবেই তৈরী হয় একটি নক্ষত্র।
বাকি প্রশ্নের উত্তর ও বিগ ব্যাং এর পূর্বের সময় নিয়ে আরো দুটি থিওরি ৩য় পর্বে থাকবে।
প্রথম পর্বের লিংক: https://bigganbortika.org/what_happened_before_bigbang_ep_01/
Leave a Reply