আমরা কেনো স্বপ্ন দেখি? (পর্ব-১ )

আপনি কি জানেন যে, বিখ্যাত বেনজিনের স্ট্রাকচার স্বপ্নযোগে  পাওয়া ?

স্বপ্ন কি ? কেন আমরা স্বপ্ন দেখি ? স্বপ্নের কি কোনও তথ্য বহন করে? কিভাবে স্বপ্নের সৃষ্টি?

যদি নন-সায়েন্টিফিক ভাবে বলি তাহলে, স্বপ্ন হলো আমাদের অবচেতন মনের স্মৃতি,ইচ্ছা,ঘটনার কিছু অংশ এবং বাস্তব কিছু ঘটনার জগাখিচুড়ি।  বিজ্ঞানের যে শাখায় স্বপ্ন নিয়ে কাজ বা গবেষণা করা হয় তাকে বলে Oneirology.

মজার ব্যাপার হলো , আমরা আমাদের স্বপ্নের ৯০-৯৫% প্রথম ১০ মিনিটে ভুলে যাই।একজন সাধারণ ব্যক্তি যে রাতে ৮ঘন্টা ঘুমায় ,রাতে সে গড়ে ৩-৫ টি  স্বপ্ন দেখে।

আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি আমাদের ব্রেইনের কিছু অংশ থাকে বিশ্রামে আর কিছু অংশ থাকে আমাদের স্মৃতিগুলো নিয়ে ব্যাস্ত।  মধ্য মস্তিষ্ক তখন ব্যাস্ত থাকে স্মৃতি নিয়ে।  যেহেতু আমাদের ব্রেইনের প্রত্যেকটা নিউরন কানেক্টেড তাই যখন আমাদের মধ্য মস্তিষ্ক স্মৃতি নিয়ে ব্যাস্ত তখন ফ্রন্ট কর্টেক্স এ মধ্য মস্তিষ্ক থেকে আসা কিছু সিগন্যাল ধরা পরে। ফ্রন্ট কর্টেক্স তখন ব্যাস্ত হয়ে যায় আসা অজানা সিগন্যালকে বিশ্লেষণ করতে। কর্টেক্স তখন সিগন্যাল কে ভিজুয়ালে পরিণত করে। কিন্তু এই ভিজুয়াল কেবল মধ্য মস্তিষ্ক থেকে আসা নয় বরং কর্টেক্স ও কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিজুয়ালে জুড়ে দেয়। আগেই বলে রাখি, কর্টেক্স এ থাকে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বাস্তব কিছু ঘটনা। আর মধ্য মস্তিষ্কে থাকে আমদের ইচ্ছা,মোটিভেশন ও অনুভূতি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের ব্রেইনের চেতন অংশ অর্থাৎ ফ্রন্ট কর্টেক্স যখন অবচেতন অংশে নজর দেয় তখনি আমরা স্বপ্ন দেখি।

Brain Signal analysis while dreaming:

যখন আমরা স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্ক থেকে Norepinephrine,Serotonin,Histamine নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়। ফলে আমাদের পেশি চলাচল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থাকে। এই ঘটনা তখনই হয় যখন আমরা REM Sleep (Rapid Eye Moving) এ থাকি। তাই স্বপ্নে যখন আমরা নড়াচড়া বা দৌড়াদৌড়ি করি বাস্তবে কিন্তু বিছানাতেই থাকি। এর ফলে অনেকসময় দেখা যায় যে আমাদের ঘুম ভেঙে গেছে কিন্তু কোনও ভাবেই শরীর নাড়াতে পারছি না। এর কারণ হিসেবে উপরের তিনটা ক্যামিকেল এর নিঃসরণ বন্ধ হওয়া দায়ী। কিছু সময়ের মধ্যেই কেমিক্যাল নিঃসরণ শুরু হয় এবং আমরা আস্তে আস্তে শরীর নাড়াতে পারি। প্রায়ই যদি এরকম হয় তাহলে তা কিন্তু হয়ে উঠতে পারে স্লিপ প্যারালাইসিস এর কারণ। এই ঘটনাকে কুসংস্কারে অনেকেই বলে, ভুতে ধরা বা বোবা ধরা। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে Complete-RAM-atophia ডিসঅর্ডার আছে। যার কারণে তারা যখন স্বপ্ন দেখে তখন বাস্তবে নড়াচড়া করে বা ঘুমন্ত অবস্থায় হাটতে থাকে।

স্বপ্ন দেখার কারণ কি? অনেক বিজ্ঞানী স্বপ্নকে কারণহীন মনে করে। কিন্তু অনেকেই একে খুব গুরুত্ব নিয়ে দেখে। আমরা একটু খেয়াল করলে দেখি যে, আমাদের স্বপ্নের বেশির ভাগ ঘটনা থাকে ভয়,চিন্তা,কঠিন কোনও কাজ অর্থাৎ নেগেটিভ অনুভূতিগুলো। এর কারণ কি? এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যখন স্বপ্নের কোনও ঘটনার বাস্তবে মুখোমুখি হই তবে টা যেনও দ্রুত বিশ্লেষণ করতে পারি। সৃষ্টির আদি-লগ্নে যখন মানুষের কেবল খেয়ে  আর বেচে থাকা ছাড়া কোনও চিন্তা ছিলো না তখন বন্য পশু থেকে কিভাবে বেচে থাকা যায় এই নিয়েই ভাবতো বা কি কি ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে তা নিয়ে ভাবতো। এর ফলে তারা স্বপ্নে দেখতো পশুর আক্রমণ, বিভিন্ন ঘটনার মুখোমুখি হওয়া।

আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে, যাকে বলে Lucid Dream। এটি একটি বিশেষ স্বপ্ন যেখানে স্বপ্নে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনি ইচ্ছে করলে স্বপ্নে কথা বলতে পারবেন, চাইলে উড়তে পারবেন চাইলে রকেটে চড়তে পারবেন। একটু চিন্তা করলেই হয়তো আমরা মনে করতে পারবো। তাহলে এই লুছিড ড্রিম এ আপনার থাকবে চেতনা শক্তি। এখন আপনাকে যা শুনাবো তা শুনে হয়তো অবাক হবে।

লুছিড ড্রিম এ আপনি একটি ওয়ার্ক প্লেস পাবেন। স্বপ্নে থাকা অবস্থায় আপনার মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশকে কাজে লাগাতে পারবেন। বিজ্ঞানী Friedrich August Kekule , যে কিনা বেনজিনের স্ট্রাকচারের আবিষ্কারক , সে হেক্সাগোনাল স্ট্রাকচারটি স্বপ্নে পেয়েছে । নিলস বোর যে কিনা Father of Quantum Mechanics সে পরমাণুর গঠন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন স্বপ্নে। আরেকটি ঘটনা হলো, পর্যায় সারণীর আবিষ্কার। আমরা সবাই পর্যায়সারণী সম্পর্কে জানি। প্রথমে আণবিক ভর এর ভিত্তিতে এই সারণী গঠিত হয়। ডিমিত্রি মেন্ডেলিফ একদিন স্বপ্নে দেখেন কিছু পরমাণু নেচে নেচে একটি চার্ট এ এসে বসেছে। তিনি দ্রুত ঘুম থেকে উঠে স্বপ্ন এর ঘটনা খাতায় লিখে ফেলেন। এর পরের বছর তিনি পারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে তৈরি করে ফেলেন প্রথম পর্যায়সারণী।

Lucid Dream সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। কিভাবে  Lucid Dream দেখা যায় এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে পরবর্তী পর্বে বলা হবে।

Comments are closed.