প্লুটো কেন বাদ পড়েছিলো গ্রহের তালিকা থেকে

১৯৩০ সালে আবিষ্কারের পর থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট এবং কিউট নাম বিশিষ্ট প্লুটোকে মানুষ গ্রহ হিসেবেই চিনে এসেছে । কিন্তু ঝামেলাটা শুরু হল তখনি যখন ৯০ পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা তর্কে লেগে গেলেন প্লুটোকে নিয়ে । অবশেষে ২০০৬ সালের ২৪শে আগস্ট প্লুটোকে চিরতরে বাদ দিয়ে দেয়া হল গ্রহের তালিকা থেকে।

বেচারা প্লুটো কি দোষ করেছিল বা তার কি যোগ্যতার অভাব ছিলো তা জানার আগে চলুন জেনে নিই তার ইতিহাস সম্পর্কে।

তার আগে বলে নিই নেপচুন আবিষ্কার হয় ১৮৪০ শতকে । তারপর এই গ্রহের গতি পর্যালোচনা করে নবম একটি গ্রহ থাকার সমস্ত সম্ভাবনা গাণিতিক ভাবে প্রমাণিত হতে থাকে উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত । এই অজানা গ্রহের নাম দেয়া হয় “প্ল্যানেট এক্স” । এর পর এই প্ল্যানেট এক্স কে খোজার জন্য যিনি অর্থ ঢালতে শুরু করেন তিনি হলেন “পার্সিভাল লয়েল” । এই বিত্তশালী ব্যবসায়ী ১৮৯৪ সালে প্লুটোকে বের করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন “লয়েল অবজারভেটরি” । কিন্তু তার জীবদ্দশায় তিনি এই গ্রহের আবিষ্কার দেখে যেতে পারেন নি। তার মৃত্যুর পর এই কাজের গতি মন্থর হয়ে যায় । অবশেষে ১৯২৯ সালে তার স্ত্রী কনস্ট্যান্স লয়েলের উদ্দ্যোগে ” ক্লাইড টমবো” নামে ২৩ বছরের এক তরুণকে নিয়োগ দেয়া হয়। এই তরুণই ১৯৩০ সালে আবিষ্কার করেন প্লুটো গ্রহ।

আবিষ্কারক ক্লাইড টমবো

প্লুটোকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা যেতে থাকে যখন এর একটি উপগ্রহ আবিষ্কার করা হয়, যা কিনা প্লুটোর চেয়েই আকারে বড়! এটা গ্রহের নিয়মের পরিপন্থী । এছাড়া বিজ্ঞানীরা পরে আরো কিছু বস্তু আবিষ্কার করেন যাদের ভর প্লুটোর ভরের চেয়ে বেশী।তাহলে তারাও তো নিজেকে দাবি করতেই পারে গ্রহের খাতায় নাম লেখানোর জন্য। তবে কি সবাইকেই গ্রহের মর্যাদা দেয়া হবে???

এমতাবস্থায় বিজ্ঞানীর গ্রহের মর্যাদার যোগ্য হবার জন্য তিনটি যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেন । যদি এই মর্যাদার পরীক্ষায় প্লুটো উত্তীর্ণ হতে পারে তাহলেই সে পাবে গ্রহের মর্যাদা । তো কি সেই তিনটি যোগ্যতা? চলুন দেখে নিই ।

১। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে হবে ।

২। যথেষ্ট পরিমাণ ভর থাকতে হবে যেন তার অভিকর্ষীয় শক্তির মাধ্যমে নিজেকে গোলাকার আকার ধারণ করাতে পারে।

৩। কক্ষপথে ঘোরার সময় তার আশেপাশের শক্তিশালী প্রভাব থাকতে হবে যেন তার আশে পাশে অবস্থিত ঘোরায় বাধা সৃষ্টিকারী বস্তু সমূহ দূর হয়ে যায়।

প্রথম পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে গেলেও শেষ দুইটিতে এসে আমাদের প্লুটো বেচারা একেবারেই ফেল । এসব দিক বিবেচনা করেই এর পরে প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ।

প্লুটো এবং তার উপগ্রহ ক্যারন

প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার ফলে মানুষ আন্দোলনেও নেমেছিলো । ব্যানার , ফেস্টূন , পোস্টার নিয়ে মানুষ দাবি তুলেছিলো , গ্রহের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে প্লুটোকে আবার গ্রহের মর্যাদা দেয়া হোক । কিন্তু সেই আন্দোলন আর আশার আলো দেখেনি ।

আর এভাবেই , আমাদের ছোটবেলায় পড়ে আসা গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় প্লুটো ।

প্লুটো সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য:

১। প্লুটো আকারে প্রায় চাঁদের সমান।

২। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে ২৪৮ বছর।

৩। সূর্য থেকে প্লুটোতে আলো পৌছাতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা যেখানে পৃথিবীতে লাগে মাত্র আট মিনিট।

তথ্যসূত্র:

১। আরো একটুখানি বিজ্ঞান। – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

২। https://wonderopolis.org

৩। https://www.universetoday.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>