আমরা কম বেশী সকলেই হয়ত Ashes এর তামাক পাতা গানটি শুনেছি। গানের সুত্রধরেই বলা চলে গাজার প্রতি আসক্তির কথা। কথায় বলা হয়ে থাকে অভ্যাস মানুষের দাস আবার অনেকেই মজার বশে কথাটাকে কিছুটা উল্টিয়ে মানুষ অভ্যাসের দাস বলতে পছন্দ করেন। তবে কথা যেটাই হোক অভ্যাস গঠনের মুলে যে রয়েছে একটি আকর্ষণবোধ এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যাকে বলা হয় আসক্তি বা Addiction.
আসক্তিকে একটু বিশ্লেষণ করলে আপনাকে এমন কিছু কল্পনা করতে হবে যে করলে আপনি নিজে অনেকটা স্বস্তি পান এবং ভাল বোধ করেন। সেটি হতে পারে একটু চকলেট বা কুকি খাওয়া হতে পারে হুইস্কির বোতলে চুমুক দেওয়া আবার এমনও হতে পারে নামিদামি কোন ব্রান্ডের সিগারেটে ফুৎকার দেওয়া অভবা গাজ বা হিরোইন নেওয়া অনেকের আবার শপিংয়ের প্রতিও তীব্র আসক্তি থাকে।
তবে এই কর্মকান্ডগুলো সক্রিয় ভাবে আমাদের নেশা হয়ে উঠে না তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়,
কেন এই আসক্তি কিভাবে তৈরী হচ্ছে এই আসক্তি?
আসলে এই আসক্তি সৃষ্টির জন্য আমরা নিজেরাই প্রলুদ্ধ হই। যদিও অনেক আসক্তি আমাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সম্পর্কের জন্য হুমকি হয়ে উঠে। এসম্পর্কে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ড্রাগ এ্যাবিউশনের পাবলিক হেল্থ অ্যাডভাইজার ও সাইন্স পলিসি শাখার পরিচালক মাউরিন বয়েল (Maureen Boyle) বলেন,
” আসক্তি বা নেশাগ্রস্থতা জীববৈজ্ঞানিক ভাবে একটি ব্যাধি।আসক্তি প্রকৃত পক্ষে একজন রোগীর জীনগত,নিউরো বায়োলজি এবং তার মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে।”
মাউরিনের বক্তব্য অনুযায়ী অাসক্তি বা নেশা অন্য দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস,ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতই একটি ব্যাধী।অন্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতই এটিও প্রতিরোধ যোগ্য ও চিকিৎসা যোগ্য। তবে চিকিৎসা না করালে এটি জীবনকাল স্থায়ী হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে এগুলো ছাড়াও আসক্তির পিছনে আরও কিছু পারস্পারিক প্রক্রিয়া রয়েছে।
যদিও প্রত্যেকের মাদকদ্রব্য বা অন্যকিছুর প্রতি আসক্তির পথ ভিন্ন।যদিও একজন মাদকদ্রব্য সেবনকারী বা আসক্তিগ্রস্থ ব্যক্তি নিজের অজান্তেই এটি করে থাকে তবে এর পিছনে আরও কিছু কারন বিদ্যমান সেটি হতে পারে সেই ব্যক্তিটি তার পরিবার,সহকর্মীরা তাকে এটি করতে প্রলুব্ধ করে।আর কেবল কৌতুহলের বসেই একসময় এটি নেশায় পরিনত হয়।
কারন মাদকদ্রব্য গ্রহন কিংবা আচরনগত আসক্তির পিছনে ভুমিকা পালন করে ডোপামিন। ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলেই আমরা আসক্তি বোধ করি।
অগ্র মস্তিষ্কের থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাসের সমন্বয়ে Reward center of brain গঠিত যা মানব মনে আবেগ,অনুভূতি, ভাল লাগা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে। আর এই ডোপামিন মস্তিষ্কেরর Reward point অর্থাৎ থ্যালামাস,হাইপোথ্যালামাস ও সেরেব্রামে বার্তা প্রেরন করে।যার ফলে একজন মানুষ অনেক বেশী প্রসান্তি অনুভব করেন এবং অনেক সংকোটপুর্ন অবস্থাতেও দৃঢ় মনোবল গঠনে ভুমিকা পালন করে।
ঠিক সেভাবেই মাদকদ্রব্য গ্রহন অথবা পছন্দের কাজ করলেও আমাদের মস্তিষ্কের Reward system সক্রিয় হয়ে যায়।
এব্যাপারে অস্টিনে অবস্থিত University of Texas এর সহযোগী অধ্যাপক ড. হিতোশি মারিকাওয়া (Dr. Hitoshi Morikawa) বলেন,”প্রাকৃতিক ভাবে সংগঠিত অাসক্তি গুলোর থেকে মাদকদ্রব্য গ্রহনে মস্তিষ্কের Reward system দ্রুত কার্যকরী হয়। এটাই প্রকৃত পক্ষে নেশাগ্রস্থ হওয়ার পিছনের মূল কারন।”
তবে গবেষণা বলছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মস্তিষ্কের Reward system কে সক্রিয় করে।
প্রথমেই আসি গাজা যাকে বলা হয় মারিজুয়ানা এটি একপ্রকার কৌতুকময় মাদক এটি ডোপামিন ব্যবহার করে মস্তিষ্কের নিউরনে হালকা রসিকতা অর্থাৎ সুড়সুড়ি দিতে থাকে এতেই সক্রিয় হয় Reward system. অন্যদিকে কোকেইন এবং অ্যাম্ফিটামিন ধীরে ধীরে নিউরনে ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজে বাধার সৃষ্টিকরে ঘোরের সৃষ্টি করে যার ফলে আমরা প্রশান্তি অনুভব করি।আর যারা এই চরম নিউরোবায়োলজিক্যাল পরিবর্তন গুলো খুব সহজেই মেনে নিতে পারেন তারাই নেশাগ্রস্থ হয়ে উঠেন।
তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হচ্ছে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা পুর্বে মাদকদ্রব্য গ্রহন করলেও বিশেষ সার্জারির পর তারা আসক্তি হারিয়ে ফেলছেন। এমনকি গবেষণাটি আরও বলছে একজন মানুষ জুয়া খেললেই জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বেন না যদি না জিনগত ভাবে তিনি এটি পেয়ে থাকেন। এবং কোন হতদরিদ্রপূর্ন সামাজিক অবস্থায় বেড়ে ওঠেন যেখানে মেন্টাল সাপোর্টের অভাব রয়েছে অথবা কোন প্রকার বড় মানসিক আঘাত পেয়ে থাকলেও যে কেউ নেশাগ্রস্থ হয়ে উঠতে পারে।
আর মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে সব থেকে বেশী ভুমিকা পালন করে তা হচ্ছে বয়স। গবেষক দলের একজন বলেন,
“কিশোরদের মধ্যে যারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে খুব বেশী সমালোচনার মুখোমুখি হয় অথবা মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হলে তারা মাদকের পথ বেছে নেয়।”
২০১৮ তে করা পরীক্ষা ছাড়াও এব্যাপারে ২০১৭ ও ২০১৪ তে পৃথক পৃথক গবেষণা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মানুষের মধ্যে প্রায় বেশীর ভাগ অর্থাৎ ৭৪% এর মত মাদকাসক্তের রোগী রয়েছে যাদের বয়স ১৭ অথবা তার থেকেও অনেক কম।
তবে ২০১৮ এর গবেষণায় বলা হয়েছে ১৫-১৭ বছর বয়সের কিশোররা যারা নেশাগ্রস্থ তাদের বেশীর ভাগই জীনগত কারনে এর স্বীকার। তবে সেখানে আর বলা হয় প্রকৃত পক্ষে কে মাদকাসক্ত হবেন বা হবেন না এর ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।
তাই আসুন নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই নিজে মাদককে না বলি। বন্ধ করি শিশু – কিশোরদের মানসিক নির্যাতন।গড়ে তুলি একটি মাদক মুক্ত একটি সচেতন সমাজ।
4 Comments
kamruzzaman Emon
গাজা নিয়ে রাজা হয়ে গেলাম। পোস্ট পড়ে মাথা ঘুরছে।
যাই হোক, অনেক তথ্য জানা হলো । ধন্যবাদ, নাঈম ভাই।
Shihab Sikder
যারা সেবন করে তাদের এসব বললে মাথার উপর দিয়ে যাবে। হিহি।
নাঈম ফেরদৌস
ধন্যবাদ ইমন ও শিহাব।
তামাকপাতা গান শুনলে নেশা কেটে যাবে ?
মহাকাশে গাঁজা সেবন নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে? | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] মাথার ভেতর গাজা কেন ঘুরে? […]