চিকেন পক্স রোগের নাম আমরা সকলেই শুনেছি। প্রায় সবাই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এসে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। চিকেন পক্স একবার হয়ে গেলে জীবনে আর কখনো হয় না। বড়দের কাছে শোনা যায়, “চিকেন পক্স ছোট বয়সে হয়ে গেলে ভালো, পরে হলে কষ্ট বেশি”। কিন্তু কি জন্য? সাধারণত যেকোন রোগ শিশুদের জন্যই বেশি ক্ষতিকর। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু চিকেন পক্সের বেলায় উল্টো কেন? আজকে জানবো সে ব্যাপারেই।
চিকেন পক্সের কারণে শরীরের প্রায় সকল জায়গায় ফোস্কা উঠে। ছোট ছোট ফোস্কাগুলো পুরো শরীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ফোস্কার উপর একটি শক্ত আবরণের সৃষ্টি হয় যার ভেতর পুঁজ জাতীয় তরল পদারর্থ থাকে। এই রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ৭-১০ দিন মতো সময় লাগে।

অভিশাপের চিকেন পক্স
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই রোগ অভিশাপের মতো। চিকেন পক্সের ফোস্কাগুলোর কারণে প্রাপ্তবয়স্ক দেহে আরো নানাবিধ রোগের সঞ্চার হতে পারে। যেমনঃ নিউমোনিয়া (ফুসফুসের ইনফেকশন), হেপাটাইটিস (যকৃতের ইনফেকশন), ইনসেফিলাইটিস (মস্তিষ্কের ইনফেকশন)। পুরুষদের জন্য এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে শিশুদের ক্ষেত্রে অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না।
শিশুদের কেন অন্য কোন রোগের সম্ভাবনা থাকে না তার উত্তর খুঁজে চলেচছেন গবেষকেরা। তবে কিছু জিনিস সামনে চলে এসেছে। অনেক গবেষকদের মতে এমনটা হওয়ার কারণ হলো ইমিউনে সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের ভিন্নতা। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রে ফ্যাগোসাইটের আধিক্য বেশি। ফ্যাগোসাইট কোষগুলো আকারে বেশ বড় ধরণের। এরা নিমিষেই যেকোন ফরেইন ম্যাটেরিয়াল কে খেয়ে ফেলতে পারে। এখানে ফরেইন ম্যাটেরিয়াল বলতে সেসকল বস্তুকণা বা অণুজীবদের বোঝাচ্ছে যাদের মানবদেহে স্বাভাবিকভাবে থাকার কথা না। অর্থ্যাৎ বাইরে থেকে দেহের ভেতর প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের ইমিউনে সিস্টেমে এন্টিবডির আধিক্য বেশি। এন্টিবডি শুধুমাত্র মানবদেহ আক্রমণকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফলে অনেক ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই এন্টিবডিকে নীরব দর্শকের মতো বসে থাকতে হয়। কিন্তু ফ্যাগোসাইটের হাত থেকে এসব ভাইরাসের নিস্তার নেই।
আবার ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ড.জন সোয়াটজবার্গের মন্তব্য অন্যরকম। মানবদেহে ভাইরাস অনেক সময় ছদ্মবেশে প্রবেশ করে। এসময় ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। যখন মানবদেহ আগে থেকেই অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে বসে আছে তখন বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস এই সুযোগটা বেশি পায়। কিন্তু শিশুদেহ এব্যাপারে খুবই সক্রিয় তাই তাদের কোন অসুবিধা হয় না। তবে শুধুমাত্র চিকেন পক্স নয় পোলিওর ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে। পোলিও যে কেবল শিশুদের হয় এমনটা না, বয়স বাড়ার পরেও এমনটা হতে পারে। তবে এসব কিছুই কেবলই সোয়াটজবারর্গের ধারণা। তিনি এখনো প্রমান করতে পারেননি।
এবার স্বাস্থ্যরক্ষায় জেনে নেওয়া যাক চিকেন পক্স নিয়ে কিছু কথা।
চিকেন পক্স একটি সংক্রামক রোগ। বায়ু, নিঃশ্বাস, হাঁচি, পুঁজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই রোগের ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। ভ্যারিচেলা নামক ভাইরাসের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। ভ্যারিচেলার প্রজনন পর্ব মাত্র ১০-২১ দিনের। অর্থ্যাৎ এই সময়ের মধ্যেই মানবদেহ চিকেন পক্সে আক্রান্ত হবে। সাধারণত ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এরোগে আক্রান্ত হয়।

রোগের লক্ষণ
- শারীরিক দুর্বলতা বা খারাপ লাগা
- জ্বর; যেটা স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের চেয়ে বড়দের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
- হাতে পায়ে ব্যথা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- পুরো শরীরে ফোস্কা ওঠা যার কথা আরর্টিকেলের শুরুতেই বলেছি।
- শ্বাসকষ্ট
চিকিৎসা
এ রোগের আলাদা কোন চিকিৎসা নেই। বিনা চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করতে ১ থেকে ২ সপ্তাহের মতো সময় লাগে।
প্রতিরোধ
ভ্যারিচেলা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে গেছে প্রায় ৩০ বছর হলো। ১২-১৫ মাস বয়সে এক ডোজ এবং ৪-৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ। এভাবে দুই ডোজে এই ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়।
গর্ভবতী নারীদের জন্য একটি সতর্কবাণী। যদি কোন গর্ভবতী নারী ফিটাস বা ভ্রূণ ধারণের পুর্বেই চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে ভ্রূণও এইরোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ভ্রূণ ধারণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে মা চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে ফিটাসে ফেটাল ভ্যারিচেলা সিনড্রোম হতে পারে। যার ফলে সন্তানের চোখে সমস্যা হতে শুরু করে ব্রেইন ডেমেজও হতে পারে। তাই অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ curiosity.com, paperity.org, forbes, livescience.com, livestrong.com