বইয়ের নাম : যারা বায়োবট
লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল
পৃষ্ঠা :৬৩
মুদ্রিত মূল্য: ৪৫ টাকা
জনরা : সায়েন্স ফিকশন
কাহিনী সংক্ষেপ :
ট্রনরা ভীষন রকমের ভয়ঙ্কর। ওরা নির্মভাবে হত্যা করে মানুষদের। বাধ্য করে পশুর মতো বেঁচে থাকতে।মানুষগুলো যেনো সভ্য হতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি লাইব্রেরীর সবক’টা বই ধ্বংস করে দিয়েছে এরা। এখন প্রকাশ্যে বই পড়া নিষেধ।বই পড়তে হয় খুব গোপনে এবং সাবধানে।তাই সবাই বই পড়ে না , কেবল যাদের অনেক সাহস আছে, তারাই পড়ে!
মাঝে মাঝেই ভয়ঙ্কর রকমের সাইরেন বাজিয়ে মানব সভ্যতায় এসে হানা দেয় এরা।তারপর লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় সমস্ত কিছু। সুদর্শন সুন্দরী ছেলে, মেয়ে আর শিশুদের পশুর মতো খাঁচায় বন্দী করে নিয়ে যায়!
একবার কোন এক ঔষধের বিক্রিয়ায় ট্রন শিশুদের হৃদপিন্ডে মারাত্নক সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। তাই তাদের বাঁচানোর জন্য অসংখ্য মানব শিশুর হৃদপিন্ড কেটে নিয়ে গিয়েছিলো ওরা। ব্যাপারগুলো রীতিমতো মারাত্নক এবং দুর্বিসহ!
অনেকেই এসব সহ্য করতে না পেরে আত্নহুতি দিয়েছিলো সমুদ্রের পানিতে।আবার অনেকে হারিয়ে ফেলেছিলো মানসিক ভারসাম্য। তবুও কিছু মানুষ বেঁচে থাকতে চাইতো একদম সত্যিকারের মানুষের মতো। ওরা গুছিয়ে নিতে চাইতো তাদের ছন্নছাড়া আগোছালো জীবনটাকে।
মৃত্যুর আগে গল্পের নায়ক কুনিলের বাবা তাদের একটা স্বপ্ন দেখিয়ে গিয়েছিলো। সমুদ্রতীরে নিজের শরীরটিকে এটমিক ক্লাস্টার দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবার আগে চিৎকার করে বলেছিলো – ” পৃথিবীতে ট্রনদের যতটুকু অধিকার,আমাদেরও ঠিক ততটুকুই অধিকার। আমরা যদি একতাবদ্ধ থাকি, শুধু তাহলেই ট্রনেরা আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না। শুধু যে ধ্বংস করতে পারবে না, তাই নয়। আমরা আবার আমাদের অধিকার নিয়ে ট্রনদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো। ”
কুনিলের বাবার দেখানো এ স্বপ্নটাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সবাই। এবং বেঁচে থাকার চেষ্টা করে সেই স্বপ্নটাকে ভীষনভাবে আঁকড়ে ধরে।
তারপর কোন এক ঝড়ের সময় হঠাৎ করেই এক রহস্যময় তরুণের সাথে দেখা হয়ে যায় কুলীনের। ছেলেটা কেমন যেনো ভাবলেশহীন আর অদ্ভূত ধরনের।
জলোছ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার বিচিত্র এক ক্ষমতাও আছে তার। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ কথা হলো তার বয়স মাইনাস দুই হাজার তিনশো নয়!
রহস্যময় এই ছেলেটি খুব সু্ন্দরভাবেই মিশে গিয়েছিলো কুলীনদের সাথে। কুলীনের মা তাকে একদম নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করতো। ভালোবেসে তার নাম দেয়া হয়েছিলো ” রুকাস”।
বেশ কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিনগুলো। তারপর একদিন হঠাৎ আবার ঝড়ের গতিতে তাদের এলাকায় এসে হানা দিলো নিষ্ঠুর ট্রনের দল। অত্যাচার যখন চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো,তখন তাদের বাঁচাতে ছুটে এলো রুকাস। হাতের ভেতর থেকে অদ্ভূত এক অস্ত্ বের করে তাড়িয়ে দিলো ট্রনদের।
সেদিনই ওরা সবাই জানতে পারলো বায়োবট নামের অদ্ভূত এক প্রজাতির কথা। উন্মোচিত হলো রুকাস রহস্য!
এবং তার পরেই শুরু হলো আর এক রোমাঞ্চকর অভিযানের!
বইটা যেমন লেগেছে : বইটা আমার কাছে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে!
যা ভালো লাগেনি : বইটা আর একটু বড় হলে কি ক্ষতি হতো? ঠিকমতো পড়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো উপন্যাসটা!
ভালো লাগা কিছু লাইন :
১.মানুষের সহ্য করার ক্ষমতার নিশ্চয়ই কোন সীমা নেই, বিশেষ করে দুঃখী মানুষের।
২.আমি ফিস ফিস করে কিরীণাকে বললাম-কিরীণা চোখ বন্ধ কর। কিরীনা চোখ বন্ধ করল।
আমি বললাম -“মনে কর তুমি দাঁড়িয়ে আছ সমুদ্রতীরে।সমুদ্রের বাতাসে তোমার চুল উড়ছে।তোমার কাপড় উড়ছে।তোমার কাছে দাড়িয়ে আছে একটা শিশু যার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে ট্রন।শিশু সেটা জানে না… সে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে ..অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্যে। শিশুটির মা তুমি…. তোমার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে দুঃখে…তবু দুঃখ বুকে চেপে তুমি ডাকছো শিশুটিকে….করুণ সুরে ভয়ংকর করুন সুরে।ডাক কিরীণা, ডাক -আমি তীব্র স্বরে বললাম, তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে ডাক সেই দুঃখী শিশুকে–“